ছোটন কান্তি নাথ :
চকরিয়ার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর আরও একটি বন্য হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার ভোররাত চারটার দিকে খুটাখালী ইউনিয়নের পূর্ণগ্রাম বনবিটের হাইথারা ঘোনা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এসময় মংহ্লা মার্মা (৪২) নামে একজনকে আটক করা হয়। সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে তা উদ্ধার করতে পারেনি বনবিভাগ।
খুটাখালীর পূর্ণগ্রাম বনবিট কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান,মঙ্গলবার ভোররাতে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের টেরিঢেবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার দু অং মার্মার ছেলে মংহ্লা মার্মা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের কাইন্দার বিলের টুম্পা পাড়ার মে মং মার্মার ছেলে অং থোয়াই চিং মার্মা (৪৫) বন্য শূকর শিকারে অস্ত্র হাতে বের হয়। তারা সংরক্ষিত বনের ভেতর মিশ্র ফলের বাগান এলাকায় বন্য শূকর শিকার করতে গেলে সামনে পড়ে যায় ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের একটি মাদী হাতি। তখন তারা প্রাণে বাঁচতে ওই হাতির মাথা লক্ষ্য করে একটি গুলি ছুঁড়ে। সেই গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হাতিটি। তাৎক্ষণিক এই ঘটনায় মংহ্লা মার্মাকে আটক করা গেলেও অন্যজন পালিয়ে যায়। সে আটক হওয়া মংহ্লা মার্মার স্ত্রীর বড় ভাই।
এ ব্যাপারে ঈদগাঁও রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন খাঁন বলেন, ‘মূলত বন্য শূকর শিকার করতে আসা দুইজনের সামনে বন্য হাতিটি পড়ে যায়। এ সময় তাদের ওপর আক্রমণ করতে পারে এই আশঙ্কাতেই বন্য হাতিটিকে গুলি করে শিকারির দল।’
তিনি জানান, এঘটনায় বন্য শূকর শিকারি দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে আদালতে। তন্মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্য আসামিকেও গ্রেপ্তার এবং হাতি হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। হাতি হত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কঙবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার এবং সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ)।
তিনি আরো জানান, গতকাল বুধবার দুপুরে ঊর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে হাতিটিকে গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতিটির সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারি ভেটেরিনারি সার্জন মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করার সময় হাতিটির মাথার ভেতর থেকে গুলিটি অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়াও আরো নানা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ল্যাবে প্রেরণের জন্য।
প্রসঙ্গত- ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে মাত্র দশদিনের ব্যবধানে একের পর এক হাতি হত্যার ঘটনা ঘটে কঙবাজারের চকরিয়া, রামু ও উখিয়াতে। ওই সময়ের ব্যবধানে তিনটি বন্য হাতির হত্যার ঘটনার পর টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট মহলের।