চকরিয়া দুর্গা মন্দিরে কোন হামলা হয়নি -সভাপতি

মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া:
“চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা বৈরাগিরখীল দুর্গা মন্দিরের কোনপ্রকার হামলা ও ভাঙচুর হয়নি। কুমিল্লায় পুজামন্ডপের ঘটনার পর এই ইস্যু নিয়ে স্থানীয় কিছু ছেলেপুলে মিছিল নিয়ে মন্দিরের দিকে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতিবন্ধকতায় তারা এগুতে পারেনি।” গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান দুর্গা মন্দিরের সভাপতি স্বপন দে।
ডুলাহাজারা ইউনিয়নের এই মন্দিরে হামলা চলছে অভিযোগ তুলে গত ১৭ অক্টোবর পৌরসভা এলাকার রতন কুমার সুশিল বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামী করা হয়েছে। সেখানে পুজামন্ডপ পাহারা দেয়া যুবলীগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও নিরপরাধ ব্যক্তিদেরও আসামী করায় হিন্দু সম্প্রদায় সহ শান্তিপ্রিয় জনগণের মাঝে চলছে প্রতিক্রিয়া।
তৎমধ্যে ১-১৭ নং আসামীরা হলো মন্দির থেকে পাঁচ কিলোমিটার দুরের খুটাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দারা। সেখানে রয়েছে জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতা, মসজিদের ইমাম, শয্যাশায়ী রোগী ও নিরপরাধ ব্যক্তিবর্গ। বাকিরা ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যানের পুত্র, চেয়ারম্যান নির্বাচনী প্রচারণায় তার সহযোগী, ফুটবলার, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ লোকজন।
খুটাখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মামলার প্রধান আসামী আব্দুল আওয়াল এই ওয়ার্ডের মেম্বার ও ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে তার পক্ষে গণজোয়ার দেখে ঈর্ষান্বিত হয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কেউ এ কাজে সহযোগিতা করেছে। নির্বাচনী মাঠ ত্যাগ করতে এটি একটি ষড়যন্ত্র বলেও দাবি তাদের।
সাম্প্রদায়িক ইস্যুর এ মামলায় ২নং আসামী বয়োবৃদ্ধ ছৈয়দ আলম। যিনি মাইনর স্ট্রোকের বাইপাস সার্জারি করে বাড়িতে বিশ্রামে থাকেন। পারিবারিক সুত্রে জানায়, তাকে এ মামলার আসামী করা হয়েছে শুনে তিনি মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে শারীরিক অবনতির দিকে যাচ্ছে।
খুটাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানায়, মামলার আসামী মোস্তফা কামাল একজন যুবলীগ নেতা। দলীয় প্রতিটি প্রোগ্রামে সে অংশগ্রহণ করে। কক্সবাজার জেলা ফুটবল লীগের একজন গোলরক্ষকও। উর্ধতন দলীয় নির্দেশ মোতাবেক এইদিন সে নেতাকর্মীদের সাথে খুটাখালীর পুজামন্ডপ পাহারায় দিচ্ছিল। এছাড়াও সাম্প্রদায়িক কোন ঘটনায় সে জড়িত নয় বলে জানায় ইউনিয়ন আওয়ামিলীগ ও যুবলীগ নেতৃবৃন্দ।
মামলার অপর আসামী ছাত্রলীগ নেতা ইমরান খান আনার, যিনি খুটাখালী ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সে সবেক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তার পিতা সিরাজুল ইসলাম মৃত্যুর আগপর্যন্ত আওয়ামী রাজনীতিতে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
এব্যাপারে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ১৫ অক্টোবর কুমিল্লার সাম্প্রতিক ঘটনার জের ধরে ওইদিন ডুলাহাজারা পাগলিরবিল পূজামন্ডপের দিকে কিছু ছেলে আসতে চেয়েছিল। তাৎক্ষণিক তাদের বাধাগ্রস্ত করে অগ্রসর হতে দেয়া হয়নি। তাছাড়া ডুলাহাজারায় এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঘায়েল করতে পৌরসভা এলাকার লোক দিয়ে এ মিথ্যা মামলাটি করা হয়েছে। এ ষড়যন্ত্রে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান চেয়ারম্যান নুরুল আমিন। তিনি এবিষয়ে ওসি, এসপি, ইউএনও, ডিসিসহ উর্ধতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মামলার বাদী পৌরসভা এলাকার রতন কুমার সুশিল বলেন, মোবাইলে এ সম্পর্কে বলা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বাড়িতে টেনশনে আছেন বলে জানান। বিশেষ অনুরোধ করায় কিছুক্ষণ পর জানাবেন বললেও পরে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
চকরিয়া হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও চকরিয়া প্রেসক্লাবের সহসভাপতি মুকুল কান্তি দাশ বলেন, নিরপরাধ কোন ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয়। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হোক।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি বলেন, বাদীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা হয়েছে। এ মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।