অনলাইন ডেস্ক: ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহসহ ৭ রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনায় সফররত ইইউ মানবিক সহায়তা কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে বিশ্বের বৃহৎ আশ্রয় শিবিরে সমন্বিতভাবে ঝুঁকি প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে বিশ্বাস করে ইইউ প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দিনব্যাপী উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নানা কার্যক্রম পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের কথা বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ সময় নাগরিক অধিকার দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ইইউ এর কাছে দাবি জানিয়েছে রোহিঙ্গারা। বিশ্বের বৃহৎ আশ্রয় শিবির কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ। যেখানে বাস করছে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গারা।

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্বে দেন মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিশনার জানে লেনোচিক। প্রতিনিধি দলটি প্রথমে কুতুপালংস্থ জাতিংসঘের ট্রানজিট সেন্টারে যান। যেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এরপর দীর্ঘপথ হেঁটে ক্যাম্প-১৮ তে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের পাঠদান কার্যক্রম দেখেন ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করেন। পরে ক্যাম্পে সম্প্রতি মুহিবুল্লাহসহ ৭ রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইইউ মানবিক সহায়তা কমিশন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিশনার জানে লেনোচিক বলেন, এটি বিশ্বের বৃহৎ আশ্রয় শিবির। এখানে সীমাবদ্ধতার শেষ নেই। অর্থনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা যেমন আছে শিক্ষা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক মুহিবুল্লাহ সহ ৭ রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ড আমাদের অবাক করেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সজাগ আছি। সমন্বিতভাবে এসব ঝুঁকি প্রতিরোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে বলে বিশ্বাস করি।

প্রতিনিধি দলের প্রধান জানে লেনোচিক আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। রাজনৈতিক বা দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন আলোচনা বা পরোক্ষভাবে রোহিঙ্গাদের উপর হওয়া নির্যাতনে জড়িতদের শাস্তির দাবি তুলে আসছে। এরই মধ্যে মিয়ানমারকে করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব ধরনের উন্নয়ন সহায়তাও বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি নির্যাতনের শিকার হওয়াদের বিভিন্ন মানবিক সহায়তা দিচ্ছে ইইউ।

এদিকে ক্যাম্পে বিদেশি কোন প্রতিনিধি দল আসলেই স্বদেশে ফিরে যাবার বিষয়ে আশায় বুক বাঁধেন রোহিঙ্গারা। তাই এবারও নাগরিক অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ইইউ কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।

ক্যাম্পে ১৮ এর বাসিন্দা রহিম বলেন, আমরা দ্রুত স্বদেশে ফিরে যেতে চাই। যদি ইইউ আমাদেরকে দ্রুত স্বদেশে ফেরত পাঠায় আমরা খুবই খুশি হব।

আরেক রোহিঙ্গা ইলিয়াছ বলেন, ৪ বছরের বেশি সময় ক্যাম্প বসবাস করছি। এখানে আর বসবাস করতে ইচ্ছে করছে না। তাই অধিকার নিয়ে নিজদেশ মিয়ানমার ফেরত যেতে পারলেই হয়। ক্যাম্পে এ পর্যন্ত বিশ্বের অনেক সংস্থা ও নেতারা এসেছেন, এখনো আসছেন। তাই তাদের কাছে দাবি জানাই, আমাদেরকে যেন দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।

প্রতিনিধি দলটি বুধবার (২৭ অক্টোবর) শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকায় রওনা হবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন। ইউরোপিয়ান সিভিল প্রোটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানেটেরিয়ান এইড (ইসিএইচও) চলতি বছর এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে তিন কোটি ইউরো সহায়তা দিয়েছে।