সিবিএন ডেস্ক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তিনমাস বাকী রইল ভোটের। তবুও বিএনপির রাজনীতিতে হাওয়া বদলের কোনো আভাসই নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে এখনও আগের অবস্থানেই অনড় বিএনপি। অন্যদিকে নির্বাচন সামনে রেখে ক্রমাগত বিদেশি চাপ। সব মিলিয়ে দিন যতই যাচ্ছে ততই জটিল হচ্ছে ভোটের রাজনীতি।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন ঘোষণার পর বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছে। দলটির নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে নানান হুমকি ও আল্টিমেটাম দিয়ে যাচ্ছেস। বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারছে না বিএনপি। যদিও ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েও আশানরুপ ফল পায়নি বিএনপি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর ভোটগ্রহণ হবে জানুয়ারির শুরুতে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন এই নির্বাচন কমিশন বরাবরই বলছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে তারা বদ্ধপরিকর। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়। কিন্তু সে সব নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এমনকি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কিছুতেই আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে আসছেন দলটির নেতারা। এজন্য তারা বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলনও করে আসছেন।
এদিকে সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে অনড় আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে তারা কিছুতেই বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর দাবি ও আন্দোলনকে তোয়াক্কা করছে না। বরং বিএনপি তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে সমাবেশ করলে আওয়ামী লীগ করছে শান্তি সমাবেশ। এভাবেই চলছে গত কয়েকমাস ধরে দেশের রাজনীতি। এর মধ্যে মার্কিন ভিসানীতি আরোপ শুরুর খবর রাজনীতির মাঠ আর উত্তপ্ত করে দিয়েছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে জানান, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করেছে। এসব ব্যক্তিদের মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দাবি একটাই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সরকার পতনের আন্দোলনে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যেই সরকারের পতন ঘটানো হবে।
অন্যদিকে বিএনপির আন্দোলনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞাকেও তোয়াক্কা করছে না আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, আমার নির্বাচন আমি করব, তুমি (যুক্তরাষ্ট্র) কে? আমরা কারও ভিসানীতির তোয়াক্কা করি না। এই দেশ গ্যাবনের আলি বোঙ্গোর দেশ নয়।
তিনি বলেন, অক্টোবরে নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) আসছেন। এরপর খেলা হবে।
সবমিলিয়ে যা বোঝা যায়, দুটি দলই অক্টোবরেই ভোটের রাজনীতির এসপার-ওসপার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এর ফলে আগামী দিনে অরাজক পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, সংলাপই এই সংকট সমাধানের একমাত্র পথ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একমাত্র সংলাপই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান দিতে পারে। তবে সংলাপ হতে হবে শর্তহীন। সমস্যার সমাধান না হলে একতরফা নির্বাচন হবে, যা সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করবে। বিদেশিরা কথা বলবেই। তবে আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে।
এদিকে শর্তহীন সংলাপে আগ্রহী নয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেওয়ার পর সংলাপ হতে পারে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি তাদের ওই ধরনের দাবি থেকে সরে এলে সংলাপ হতে পারে।