মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন (বিপি: ৮১০৮১২১৬৩৮) বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা "বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল-বিপিএম (সেবা)" পদক লাভ করেছেন। ২০২০ সালে কক্সবাজার জেলা পুলিশে দায়িত্ব পালনকালে গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃংখলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এডিশনাল এসপি মোঃ ইকবাল হোসাইন-কে গুরুত্বপূর্ণ এ পদকের মনোনীত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ২০ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-২ থেকে ৪৭ নম্বর স্মারকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন'কে দুর্লভ সম্মাননা 'বিপিএম' পদকের জন্য মনোনীত করা হয়।
বিপিএম (সেবা) পদকের জন্য মনোনীত কক্সবাজার জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও জেলা পুলিশের তৎকালীন মুখপাত্র মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন (বিপি: ৮১০৮১২১৬৩৮) মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার পীরপুর গ্রামের মাষ্টার শওকত আলী ও মোছাম্মৎ সুফিয়া শওকতের গর্বিত সন্তান। বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিশনাল ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিক) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বিবদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে অনার্স ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্বিবদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন সফলতার সাথে। ২০০৮ সালে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে বিসিএস পুলিশ প্রশাসনের একজন গর্বিত সদস্য হিসাবে সরকারি চাকুরীতে যোগ দেন।
চাকুরির শুরুতে মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) যোগ দেন। জাতিসংঘের মিশনে যুদ্ধ বিপর্যস্ত দেশ মালে’তে দায়িত্ব পালন করেছেন সুনাম ও পেশাদারিত্বের সাথে। ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি)। স্বজ্জ্বন, অমায়িক, পরিশ্রমী, জনবান্ধব ও দুরদর্শী পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে তিনি উজ্জ্বলতার স্বাক্ষর রেখেছেন চাকুরিস্থলের সবখানে। বিদায়ী কর্মস্থল থেকে বার বার বিদায় নিয়েছেন সহকর্মীদের অশ্রুজলে। চৌকস ও মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ২০১৮ সালের আগস্টের শেষ সপ্তাহে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হতে কক্সবাজার জেলা পুলিশে যোগদান করেন। এডিশনাল এসপি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন নীতি আদর্শে অটল থেকে তখন হতে কক্সবাজার জেলা পুলিশের দায়িত্ব পালন করে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) যোগ দিয়ে সেখানে অদ্যাবদি কর্মরত আছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন মাদক দ্রব্য উদ্ধার, মাদক বিরোধী সফল অভিযান, অপরিসীম ত্যাগ, অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপক সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে বাংলাদেশ পুলিশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক 'আইজিপি ব্যাজ' প্রদান করা হয়েছে ২০২০ সালে। একই সালের ৭ জানুয়ারি তৎকালীন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) ঢাকাস্থ রাজারবাগ পুলিশ হেডকোর্য়াটারে জাতীয় প্যারেড মাঠে জাতীয় পুলিশ সপ্তাহের তৃতীয়দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ (IGP’s exemplary good services badge)
ব্যাজ মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন-কে পরিয়ে দেন। এছাড়াও চাকুরীজীবনে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্নসময়ে পেয়েছেন আরো অনেক মূল্যবান পুরস্কার ও সম্মাননা।
বর্তমানে ডিএমপি'র এডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ২০১৩ সালের ২৯ মার্চ নবীন চিকিৎসক ডা. সাদিয়া জামান-কে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে বেচে নেন। গর্বিত স্বামীর কর্মে সবসময় উৎসাহ প্রদানকারী, সংসারের জন্য ত্যাগস্বীকারকারী মেধাবী ডা. সাদিয়া জামান গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইসএসসি পাশ করেন। পরে সিলেট উইমেন মেডিকেল কলেজ থেকে সফলতার সাথে এমবিবিএস পাশ করে স্বনামধন্য একজন চিকিৎসক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন এবং চিকিৎসক ডা. সাদিয়া জামান তাহসিনা হোসাইন ইসরাহ এবং ইলিফাত হোসাইন সাফওয়ান নামক ফুটফুটে ২ সন্তানের গর্বিত জনক ও জননী।
বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মাননা বিপিএম পদক পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), বর্তমানে ডিএমপি'র এডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন মহান আল্লাহতায়লার কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করে সিবিএন-কে বলেন, আজকের এই দিনে তাঁর মরহুম বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার শওকত আলীকে তাঁর বেশী মনে পড়ছে। তাঁর প্রাপ্ত এই বিরল সম্মাননা বিপিএম পদক তিনি তাঁর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার শওকত আলী সহ, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, ইতিমধ্যে আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ও বেঁচে থাকা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের উদ্দেশ্য উৎসর্গ করেন। কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন এ অসামান্য সম্মাননা বিপিএম (সেবা) পদক প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার), চট্টগ্রাম রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি, বর্তমানে অতিরিক্ত আইজিপি ও রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম, কক্সবাজারের সাবেক পুলিশ সুপার, বর্তমানে রাজশাহী জেলার এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার), বাংলাদেশ পুলিশের মনোনয়ন বোর্ডের বিজ্ঞ জুরিস্ট, বাংলাদেশ পুলিশের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। তিনি এ শুভক্ষনে সংশ্লিষ্ট সকলেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ভবিষ্যতে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনে মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন সকলের আন্তরিক সহযোগিতা, দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করেছেন।
ডিএমপি'র এডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বিপিএম পদক এর জন্য মনোনীত হওয়ার পর তাঁর নিজস্ব ফেসবুক আইডি-তে শোকরিয়া জ্ঞাপন করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। নিন্মে স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো :
"আলহামদুলিল্লাহ! লক্ষ-কোটি শুকরিয়া মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি। বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব
“বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা" প্রদান করায় অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।
কৃতজ্ঞতা, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়, বাংলাদেশ পুলিশ এর আইকনিক আইজিপি স্যার, তৎকালীন ডিআইজি স্যার ও বিশেষ করে কক্সবাজার জেলা পুলিশের তৎকালীন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন স্যার সহ সংশ্লিষ্ট সকল সিনিয়র স্যার ও প্রিয় জুনিয়র সকল সহকর্মীদের প্রতি।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আমার আশ্রয়স্থল মা, বাবা, ভাই, বোন স্ত্রী সহ সকল শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি, যাদের দোয়া ও ভালোবাসায় আল্লাহ তায়ালা এখনো ভালো রেখেছেন।
আন্তরিক শ্রদ্ধা মনোনয়ন বোর্ডের সিনিয়র স্যারদের প্রতি, যারা আমাকে মনোনীত করেছেন বিপিএম পদকের জন্য।
বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য হিসেবে দেশ মাতৃকার সেবায় সর্বদা নিয়োজিত থেকে আমি যেন আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা,আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে পালন করতে পারি সেই দোয়া কামনা করছি সকলের কাছ থেকে।"
প্রসঙ্গত, আগামী রোববার ২৩ জানুয়ারি জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক প্রদান করবেন।