– বদরুল ইসলাম বাদল
স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশ বিজয়ের আগে পর্যন্ত বিদেশি শাসকদের হাতে শোষণের নিমিত্তে শাসিত থাকে। রক্তঝরা বিজয় লাভের সময় যুদ্ধবিধস্ত দেশটি পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্রতম দেশ ছিল ।খাদ্য গুদাম খালি। রাস্তাঘাট ভঙ্গুর। রিজার্ভ ছিল শুন্যের কোটায় ।আর স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের মাথায় বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। উন্নয়নের ধারায় পৃথিবীর অন্য দেশের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ। 2021 সালের 3মে হিসাব অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ 45 বিলিয়নের ঘরে। এককোটির ও বেশি প্রবাসীদের পরিশ্রম ও দেশপ্রেমের ফসল এই বিশাল অংকের রিজার্ভ। তবে প্রবাসীরা তাদের ন্যায্য অধিকার এবং প্রাপ্তি নিয়ে চরম হতাশায় আর পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তা হীনতায় উদ্বীগ্নতা থেকে রেহাই পায়নি। ।দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তারা।দেশ, বাড়ি, আত্মীয় স্বজন ছেড়ে হাজার হাজার মাইল দুরে একাকিত্ব জীবন নিয়ে কায়িক পরিশ্রম, মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে টাকা পাঠাচ্ছে দেশে।ফলে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।কিন্তু বহু প্রবাসীদের অভিযোগ দেশ এবং জাতি তাদের ত্যাগের সঠিক মুল্যায়ন করে না। প্রবাসীদের বোবাকান্না বুঝতে চায় না কেউ ।সব সময় সকল জায়গায় নানা রকম প্রতারণার সম্মুখীন হয়।যা প্রতিদিন মিডিয়ার বদৌলতে উঠে আসছে।আবার অনেকে হয়রানির ভয়ে চোখ বুজে সহ্য করে।প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি সম্বৃদ্ধি নিয়ে জাতি যতটুকু সোচ্চার , প্রবাসীদের মানষিক চাপ, সুরক্ষা এবং প্রতারণা প্রতিরোধ বিষয় নিয়ে ততই নিরুত্তাপ, উদাসীন।
প্রবাস হল জীবন জীবিকার কারণে অন্য দেশে অবস্থান করা।থাকে পাহাড় ছোঁয়া সপ্ন,মা বাবা ভাইবোন সহ পরিবারের সবার হাসি আর স্বচ্ছলতা ।দিন রাত পরিশ্রম করে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে কষ্টকে আলিঙ্গন করে বছরের পর বছর প্রবাস নামের এই মুক্ত জেলখানায়। সাধারণ ভাবে প্রবাসী বলতে সবাই মনে করে অঢেল টাকার মালিক। আর্থিক ভাবে অনেক বেশি স্বচ্ছল।তবে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করলে বলা যায় অনেক প্রবাসী তাদের পরিবারের চাওয়া মিটিয়ে নিজের জন্য কিছু রাখতে পারে না।শুধু তাই নয় নিজের এবং পরিবারকে সুখী করতে গিয়ে অনেক প্রবাসী লাশ হয়ে ঘরে ফিরে।
এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসী হলেও সকলের জন্য প্রবাস জীবন সুখের হয় না।পরদেশে ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সাথে কাজ করতে গিয়ে অনেক দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়। যে কাজ করার জন্য বিদেশে আসে, দেখা যায় অনেকে সে কাজ পায় না।মালিকের যা ইচ্ছে তাই করায়। দিনের অনেক টা সময় পরিশ্রম করে ও নিস্তার নাই। মালিক ভালো না হলে ঠিকমত বেতন পায় না।উপরন্তু নেমে আসে মানষিক অত্যাচার এবং শারীরিক নির্যাতন।তাও আবার মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়।কারণ বিদেশে সঠিক আইনি সহায়তা পাওয়া যায় না ।আবার বাংলাদেশ মিশন গুলো প্রবাসীদের সমস্যা নিয়ে উদাসীন।দূতাবাসের কর্মকর্তারা অনেকে প্রবাসী দের সাথে খারাপ আচরণ করে।মধ্যপ্রাচ্যে অদক্ষ এবং অশিক্ষিত প্রবাসী শ্রমিক বেশি।তারাই বেশি নিগৃহীত হয়। যা প্রতিনিয়ত পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশে আসার সময়ে বিমানবন্দরে ও অনেক সময় ভত্সনা এবং লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে দেখা যায়।তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রবাসীদের দুঃখ দুর্দশা লাঘব নিয়ে প্রবাসী মন্ত্রণালয় এবং দূতাবাসের প্রতি নজর দেওয়া দরকার মনে করে প্রবাসীরা।
প্রবাসী দের নিয়ে কাজ করছে এমন এক বিশ্লেষকের অভিমত, “যখন তুমি প্রবাস জীবন অতিবাহিত কর তখন তুমি সেই দেশেও বিদেশি আর নিজের দেশে ও বিদেশি।একটার জন্য ও তুমি যথেষ্ট নয়। ” দেশইবা প্রবাসীদের কতটা খেয়াল রাখে।দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার কথা আসলেই শুধু প্রবাসীদের বাহবা দেয়া হয়, গুণকীর্তন করা হয়।এরপর রাষ্ট্র বা সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরে চরম ভাবে অবহেলিত হয়।অনেক জায়গায় “কামলা”বলে তিরস্কার করা হয় ।প্রবাস জীবন শেষে দেশে একটা কিছু করার ইচ্ছে নিয়ে চিন্তা করলে অনেক প্রবাসী প্রতারণার স্বীকার হয়। আবার প্রতিকার চাইতে গিয়ে হতে হয় হাজারো নাজেহাল ও হয়রানি। দেশের প্রচলিত আইনের দীর্ঘসূত্রীতার কারণে বহু প্রবাসী আইনী সহায়তা নিতে চায় না। কারণ স্বল্প সময়ের ছুটিতে নির্দিষ্ট সময়ে চাকরি বাচানোর জন্য তাদের ফেরত যেতে হয়। ফলে সুযোগ সন্ধানী প্রতারক চক্র প্রবাসীদের সাথে হয়রানি করার অপপ্রয়াস চালাতে সাহস পেয়ে থাকে। তাই বলা যায় যে, বিদেশে যেমন তাঁরা প্রবাসী আবার নিজের দেশে ও যেন প্রবাসী। প্রবাসীরা তাদের নানাবিধ সমস্যার প্রতিকার চায়।পেতে চায় সামাজিক মর্যাদা এবং বাঁচতে চায় লোভী মানুষের আক্রোশ থেকে।
প্রবাসীদের অধিকার সুরক্ষা নিয়ে তাদের দাবি নিয়ে অনেক প্রবাসী সংগঠন সোচ্ছার হচ্ছে। দশ দফা দাবি জানিয়েছে প্রবাসী অধিকার পরিষদ। সংগঠনটি মনে করে প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।তাই তারা দাবি জানান যে,”প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুযোগ সুবিধা, নাগরিক অধিকার, স্বার্থ সংরক্ষণ, প্রাপ্য অধিকার আদায়, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব এবং কর্তব্য”।তাই দাবী আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ নিয়ে মানব বন্ধন স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে কক্সবাজার প্রবাসী কল্যান সমিতি।প্রবাসীদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করছে অনেক দিন থেকে কক্সবাজার প্রবাসী সংগঠন। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে প্রবাসীদের দাবি মেনে নেয়ার আর্জি রাখছে এই সংগঠন।
প্রতিদিন খবরের কাগজে প্রবাসীদের আর্তচিৎকার নানা দুর্ভোগের কথা উঠে আসছে। প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারণে সম্মিলিত প্রচেষ্টার অভাবে তাদের সমস্যাবলীকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না বিমাতা সুলভ আচরণ করা হয় ।বাংলাদেশের প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষের সংগঠন আছে।সে ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার প্রবাসী সমিতি প্রবাসী সুরক্ষা এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে ভূমিকা পালন করবে আশা করি।
দেশের উন্নয়ন সম্বৃদ্ধিতে প্রবাসীরা বড় অংশীদার। এদের খাটো করে দেখার সুযোগ নাই। প্রবাসীরা যতই নিরাপদ নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা পাবে ততই গতিশীল হবে প্রবাসী আয়।অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শরিফুল আলমের ভাষায়, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ের ধারা অব্যাহত থাকলে 2030 সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং 2041 সালে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবেই।তবে রাষ্ট্র -দূতাবাস-স্বজন-সমাজ সবাইকে মনে রাখতে হবে প্রবাসীরা শুধু টাকা পাঠানোর যন্ত্র নয়।তাঁরাও মানুষ। কাজেই সব সময় তাদের মানবিক মর্যাদা দেওয়া দরকার”।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।