মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মেহেদী হাসান নামক একজন মেধাবী ছাত্রকে হত্যার দায়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ১০ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ রায় প্রদান করা হয়।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এডিশনাল পিপি এডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী জানান, ২০১০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী রাত ১০ টার দিকে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের তৎকালীন বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ সোলাইমানের পুত্র কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র, ক্ষুদে বিজ্ঞানী, অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন মেহেদী হাসান (১৯)-কে তার বন্ধু শাহেদ কক্সবাজার শহরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ডেকে আনে। সেখানে বিভিন্ন ঘটনার জের ধরে মেহেদী হাসানকে ৫ জন মিলে ডেকোরেশনের বাঁশ দিয়ে দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আব্বাস উদ্দিন জানান-এঘটনায় নিহত মেহেদী হাসান এর পিতা মোহাম্মদ সোলাইমান বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামী করে কক্সবাজার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার কক্সবাজার সদর থানা মামলা নম্বর : ৫৪/২০১০ ইংরেজি। জিআর নম্বর : ২৭৯/২০১০ ইংরেজি এবং এসটি মামলা নম্বর : ৬১০/২০১১ ইংরেজি।

কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসাইন জানান, মামলায় ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ, জেরা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থন, যুক্তিতর্ক শেষে ৫ জন আসামীকে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন। এছাড়া আসামীদের প্রত্যেককে ৫ লক্ষ টাকা করে অর্থ দন্ড দেওয়া হয়। অর্থদন্ড অনাদায়ে প্রত্যেককে অতিরিক্ত আরো ৩ বছর করে কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

দন্ডিত অর্থ আদায়ের পর তার থেকে ১০ হাজার টাকা বিচার কার্যক্রমের খরচ বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে রায়ে আদেশ দেন বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন। অবশিষ্ট ২৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা নিহতের ক্ষতিপূরণ বাবদ নিহত মেহেদী হাসান এর মাতা রোজিনা আক্তারকে পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্তরা হচ্ছে-মোঃ ফারুক প্রকাশ ওমর ফারুক (২০), পিতা-ফরিদ আহমদ, শাহেদ (২২), পিতা-আবুল বশর, মিটু (২২), পিতা-জহির আহমদ, ওয়াসিম (২৫), আমির হোসেন এবং সাগর, পিতা-তৈয়বুর রহমান। তাদের সকলের বাড়ি কক্সবাজার শহরের বাহারছরা ও মধ্যম বাহারছরায়। আসামীদের মধ্যে মিটু, ওয়াসিম, এবং সাগর পলাতক রয়েছে। রায় ঘোষনার সময় আসামী মোঃ ফারুক প্রকাশ ওমর ফারুক ও শাহেদ কাটগড়ায় ছিলো। রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোজাফফর আহমদ।

নিহত মেধাবী মেহেদী হাসান ছিলেন একজন ক্ষুদে বিজ্ঞানী। তার আবিস্কৃত অটো ‘ডাস্ট ক্লিনার’, ‘বৈদ্যুতিক চুরি’ ঢাকার আগারগাঁও জাতীয় জাদুঘরে এবং ‘সিকিউরিটি লক’ শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরে স্থান পেয়েছে।

এ মামলার রায়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন তাঁর পর্যবেক্ষনে বলেন, মামলার সাক্ষ্য, প্রমাণে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত সকল আসামী ফাঁসি অথবা আমৃত্যু কারাদন্ডাদেশ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু আসামীদের কম বয়স বিবেচনায় উক্ত ধারা সমুহের অপেক্ষাকৃত লঘু শাস্তি হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষনে বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, অভিভাবকদের তাদের উঠতি বয়সী সন্তানদের চলাফেরা, আচার আচরণ, পড়াশোনা ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতনার সাথে খোঁজ খবর রাখা দরকার। মেহেদী হাসান হত্যার আগে তাদের অভিভাবকেরা সন্তানদের রাতে বাড়ি থেকে বের হতে নাদিলে এ ঘটনা হয়ত সংঘটিত হতো না। এজন্য সন্তানদের সবসময় অভিবাবকদের নজরদারির মধ্যে রাখা জরুরি।