নুরুল কবির, বান্দরবান থেকে :
বান্দরবান জেলায় ট্রেন পথ নেই, নৌ পথটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই যোগাযোগরে প্রধান মাধ্যম সড়ক পথ। কিন্তু পাহাড়ের সড়ক যোগাযোগে জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী সেতু দিয়েই যুগ যুগ ধরে যানবাহন ও লোকজন চলাচল করছে। এসব সেতু এতোটাই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ যে, সেতুর নিচে আলাদাভাবে লোহার পাইপ ও পাশে বালুর বস্তা দিয়ে কোনোমতে সেতুগুলো চালু রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, বান্দরবান সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতায় জেলার অভ্যন্তরে ৮টি সড়ক রয়েছে। এসব সড়কে বর্তমানে ১৫৯টি বেইলী সেতু রয়েছে। এরমধ্যে সড়ক বিভাগের আওতায় রয়েছে ৭৬টি সেতু, আর সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ (ইসিবি) এর আওতায় ৮৩টি বেইলী সেতু ও সড়ক নির্মাণ হবে। বান্দরবান সড়ক বিভাগের ৭৬টি বেইলী সেতু পর্যায়ক্রমে পাকা গার্ডার সেতু নির্মাণ হবে। বর্তমানে ৬৪টি বেইলী সেতু চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি সেতু পাকা করার প্রকল্প অনুমোদনের পর এগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে। ইতিমধ্যে তিনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন ও অন্যগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। এদিকে আরও ১২টি বেইলী সেতা পাকা করার জন্য প্রায় ৭৮ কোটি টাকা প্রাক্কলন ধরে সড়ক অধিদপ্তরে প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে।এদিকে বেইলী সেতুগুলোর অনেকগুলো এতোই ঝুঁকিপূর্ণ যে মালামাল বোঝাই করে ট্রাক চলাচলের সময় বেইলী সেতুর পাটাতল খুলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। গত ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা বান্দরবান-রোয়াছড়ি সড়কের হানসামা পাড়া এলাকায় নোয়াপতং খালের ওপর থাকা বেইলী সেতু দিয়ে বালু বোঝাই ট্রাক রোয়াংছড়ি যাওয়ার সময় সেতুর তিনটি ইস্পাত (স্টিল) পাটাতন খুলে পড়ে যায়। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১৮ ঘন্টা পর ১০ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে সড়ক বিভাগ বেইলী সেতুটির পাটাতন ঝালাই (ওয়েল্ডিং) কাে যানবাহন চলাচলের জন্য পুনরায় খুলে দেয়।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ বছরে পাকা গার্ডার সেতু না হওয়ায় বেইলী সেতুগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। সড়ক বিভাগ তাই প্রতিটি সেতুর দুই পাড়েই ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, সর্বোচ্চ ৫ টন মালামাল গাড়িতে পরিবহন করা যাবে’- এমন বিজ্ঞপ্তি সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, সড়ক বিভাগের লাগানো এসব বিজ্ঞপ্তি যানবাহন চালকরা প্রায়ই অমান্য করে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো দিয়ে ৫ টনের অধিক পণ্যবাহী গাড়িও চলাচল করে। ফলে সেতুগুলো আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। বেইলী সেতুগুলো জরাজীর্ণ হওয়ায় সড়ক বিভাগ জোড়াতালি দিয়ে, মাঝেমধ্যে সংস্কার করে এগুলো যানবাহন চলাচলের জন্য সচল রেখেছে। কিন্তু অনেকগুলো সেতু এতোটাই জরাজীর্ণ যে বেইলী সেতুকে টিকিয়ে রাখতে আলাদা লোহার পাইপ ও বালুর বস্তা দিয়ে কোনোমতে রক্ষা করে সেতুগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
এদিকে সরেজমিন বান্দরবানের বিভিন্ন সড়কে ঘুরে দেখা গেছে, অনেকগুলো বেইলী সেতু পুরাতন হওয়ায় চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বান্দরবান সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, সড়ক বিভাগের আওতায় থাকা ৭৬টি বেইলী সেতুকে পাকা গার্ডার সেতুতে পরিণত করার কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি সেতু পাকা করণের কাজ শেষ পর্যায়ে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১০টি বেইলী সেতু পাকা করার জন্য প্রাক্কলন (ইস্টিমেট) তৈরি কওে সড়ক অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ ১০টি সেতু পাকা করার জন্য প্রায় ৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এই বরাদ্দ পেলে বান্দরবান সড়ক বিভাগে বেইলী সেতুর বদলে পাকা গার্ডার সেতুর সংখ্যা বাড়বে। এতে করে বান্দরবান সড়ক বিভাগের যানবাহন চলাচল আরও গতিশীল হবে। সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, ৭৬টি সেতুর মধ্যে ১২টি সেই পাকা গার্ডার সেতুর কাজ চললেও অন্য ৬৪টি বেইলী সেতু পাকা গার্ডার সেতু করার বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার অপেক্ষায়। এসব সেতু হলেই বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ পরিপূর্ণ হবে।
বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী সেতুগুলোর মধ্যে চকরিয়া-লামা-ফাঁসিয়াখালী-আলীকদম সড়কের ইয়াংছা এলাকার বেইলী সেতু, লামা-আলীদম বেইলী সেতু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু চালু রাখতে সেতুর স্বাভাবিক খুঁটির পাশাপাশি আলাদাভাবে পাইপ ও বালুর বস্তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু যেকোনো সময় সেতুগুলো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।#
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।