সোয়েব সাঈদ, রামু:
রামুর রাজারকুল ইউনিয়নে সেচ স্কীম নিয়ে জটিলতায় ২০ একর জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এতে শতাধিত কৃষক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে বোরা চাষাবাদের সময় পার হতে চললেও পানির অভাবে এসব জমিতে নেই সবুজের সমারোহ।
সেচ স্কীম মালিক ও কৃষকরা এজন্য কক্সবাজার সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার গাফেলতি রয়েছে বলে দাবি করেছেন। তারা জানান- পানি সেচের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও সমবায় কর্মকর্তার অসহযোগিতার কারণে এখনো স্কীমের বিদ্যুৎ সংযোগ মিলেনি। একারণে সেচ পাম্পসহ সকল সরঞ্জাম থাকা সত্তে¡ও সেচ কার্যক্রম চালু করা যায়নি।
জানা গেছে- রাজারকুল ইউনিয়নের ছানা উল্লাহ সেচ স্কীম মালিক ছানা উল্লাহ দীর্ঘদিন সেচ স্কীম পরিচালনা করতেন। পরে তার অবর্তমানে নুর আহমদ স্কীম পরিচালনা করতেন। নুর আহমদ বিদেশ চলে গেলে জনৈক আবদুল জলিল স্কীমটি পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু আবদুল জলিল স্কীম পরিচালনায় ব্যর্থ হলে স্থানীয় কৃষকরা ফের ছানা উল্লাহকে স্কীম পরিচালনার দায়িত্ব দেন। এরই প্রেক্ষিতে রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছানা উল্লাহকে স্কীম পরিচালনার জন্য লিখিত অনুমোদন দেন। এছাড়া গত ৩ জানুয়ারি বিএডিসি’র কক্সবাজার সদর ইউনিটের উপ-সহকারি প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) ও কক্সবাজার সদর সেচ কমিটির সদস্য সচিব শওকত আলী সবুজ রাজারকুল মৌজায় ছানা উল্লাহ সেচ প্রকল্প পরিদর্শন করেন এবং স্কীমটিতে বৈদ্যুতিক মিটার ও সংযোগ প্রদান এবং বাঁকখালী রাবার ড্যাম সেচ কমিটির অনুমতি প্রদানের নিমিত্তে ছাড়পত্র দেন।
ইতিপূর্বে বিএডিসি’র রামু ইউনিটের উপ-সহকারি প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) ও উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব রানা প্রতাপ বিশ^াস রাজারকুল মৌজায় ছানা উল্লাহ সেচ প্রকল্প পরিদর্শন করেন এবং স্কীমটিতে বৈদ্যুতিক মিটার ও সংযোগ প্রদান এবং বাঁকখালী রাবার ড্যাম সেচ কমিটির অনুমতি প্রদানের নিমিত্তে ছাড়পত্র দেন। এসব ছাড়পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়- ছানা উল্লাহ সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০ একর কৃষি জমি রয়েছে। আবেদিত এ সেচ স্কীমের পাশে অন্যকোন সেচ যন্ত্র নেই। এজন্য ২০২১-২০২২ সেচ মৌসুমে বোরো চাষের জন্য স্কীম মালিক ছানা উল্লাহকে বৈদ্যুতিক মিটার ও সংযোগ প্রদান এবং বাঁকখালী রাবার ড্যাম সেচ কমিটির অনুমতি প্রদানের নিমিত্তে ছাড়পত্র প্রদান করা হলো। এরই প্রেক্ষিতে স্কীম মালিক ছানা উল্লাহ কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও মিটার চেয়ে আবেদন করেছেন।
স্কীম মালিক ছানা উল্লাহ জানান- সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা অনুমতি না দেয়ায় বৈদ্যুতিক সংযোগ ও মিটার পাচ্ছেন না। অথচ তিনি সেচ কার্যক্রমের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। তাছাড়া আবদুল জলিল নামের এক ব্যক্তি ইতিপূর্বে স্কীম পরিচালনা করলেও তার উপর কৃষকরা সন্তুষ্ট নন। এমনকি তিনি চলতি মৌসুমে স্কীমের সেচ কার্যক্রমও বন্ধ রেখেছেন। তাই কৃষকদের বৃহত্তর দাবির প্রেক্ষিতে সব মহল থেকে তাকে (ছানা উল্লাহ) স্কীম পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হলেও সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার গাফেলতির কারণে সেচ কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। ফলে এ স্কীমের আওতাধিন ২০ একর জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চিত হতে চলেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রমিজ উদ্দিন জানান- এখানে আবদুল জলিল নামের একজন স্কীম ম্যানেজার রয়েছেন। তাকে এখনো বাদ দেয়া হয়নি। তাছাড়া আবদুল জলিলের নামে মিটারও রয়েছে। তাকে বাদ দিয়েই ছানা উল্লাহকে অর্ন্তভূক্ত করতে হবে। এটা সময় সাপেক্ষ। এছাড়া সরেজমিন গিয়ে ছানা উল্লাহর স্কীমে সেচ দেয়ার উপযোগিতা দেখা যায়নি। তাই তাকে আগামী মৌসুম থেকে স্কীম পরিচালনার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরো জানান- এবার সেচ স্কীম পরিচালনা করা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ এখন বাঁকখালী নদীতে পানি শুকিয়ে গেছে।
এদিকে রাজারকুল ছানা উল্লাহর সেচ স্কীমের আওতাধিন কৃষকদের মধ্যে পূর্ব উমখালী এলাকার হারুন, হাফেজ পাড়া এলাকার আবদুল জলিলের ছেলে কবির আহমদ, আবদুস ছোবহানের ছেলে জাফর আলম ও পশ্চিম হালদারকুল গ্রামের ফয়েজ আহমদের ছেলে নুর আহমদ জানান- ছানা উল্লাহর সেচ স্কীমের পানি দিয়ে তারা চাষাবাদের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এমনকি তাদের বীজতলাও এখন বিনষ্ট হওয়ার পথে। শুধু মাত্র বৈদ্যুতিক সংযোগ ও মিটার না পাওয়ায় তিনি সেচ কার্যক্রম শুরু করতে পারছেননা। এখন বোরা মৌসুম শেষের দিকে। তাই তারা পানি নিয়ে জটিলতা নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।