চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে চীনের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি নিজেদের খরচে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন, বিনিময়ে মীরসরাইয়ের কাছে সাগর থেকে উদ্ধার করা জমিতে তারা একটি স্মার্ট সিটি বানিয়ে সেখান থেকে লভ্যাংশ নিতে চায়।

প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিডিএ কর্মকর্তারা বলছেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইও নিজেদের খরচে করার প্রস্তাব দিয়েছে চীনা কোম্পানিগুলো। বিষয়গুলো তারা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারকে জানাবেন, সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার সরকারই নেবে।

সিডিএ এর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “আমাদের বে টার্মিনালের যে নির্ধারিত স্থান, তার পর থেকে মিরসরাই পর্যন্ত সাগরের মধ্যে একটি চরের মত আছে। ওই জায়গায় সাগরের জমি রিক্লেইম (ভূমি উদ্ধার) করে তারা টাউনশিপ (উপশহর) করতে চায়। বিনিময়ে তারা মেট্রোরেল পুরোটা তাদের অর্থায়নে করার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কোনো টাকা লাগবে না।

চীনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সাগরের জমি উদ্ধার করে যে ‘স্মার্ট সিটি’ তারা গড়তে চায়, তার দায়িত্ব তাদের হাতেই থাকবে। সেখানে প্লট বিক্রির টাকা তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং এর পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে প্রশ্ন করলে হাসান বিন শামস বলেন, বে টার্মিনালের পর থেকে মিরসরাই পর্যন্ত অংশের সাগরের জমি উদ্ধারের কথা রয়েছে প্রস্তাবে। তবে মাঝে জাহাজভাঙা শিল্পসহ যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো বাদ যাবে।

“এটা সাগরের ডেড এন্ড। এখানে সাগরের জমি উদ্ধার করলে কোনো ক্ষতির ঝুঁকি নেই। দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাগরের ভূমি রিক্লেইম করে এরকম টাউনশিপ করা হয়েছে। এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতাও আছে বলে তারা আমাদের জানিয়েছে। বলেছে, এমন প্রযুক্তি তাদের কাছে আছে, যাতে ওই অংশে সাগরের পানি স্বচ্ছ দেখা যাবে।”

এই সড়কের পাশে সাগর তীরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। কর্ণফুলী নদীতে টানেল এবং পদ্মা সেতুর কাজও চীনা প্রতিষ্ঠান ‘অত্যন্ত দ্রুত গতিতে’ করছে বলে মন্তব্য করেন সিডিএ এর এই কর্মকর্তা।

চট্টগ্রামের মেট্রোরেল প্রকল্প নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াও আগ্রহী। ইতোমধ্যে উন্নয়ন সংস্থা কোইকার মাধ্যমে এ প্রকল্পের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে তারা। এ কাজে তারা ৫ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবেও দিতে চায়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের উপস্থিতি এ বিষয়ে এক বৈঠকে কোইকা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার মধ্যেই চীনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবের বিষয়টি সামনে এল।

প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, “এখন সরকার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে কোন প্রস্তাব নিয়ে এগোবে। তবে চীনের প্রস্তাবে মেট্রোরেল ও টাউনশিপ দুটোই তারা নিজ খরচে করবে। শুধু টাউনশিপে তারা প্রফিট শেয়ার করতে চায়। সেটা কত শতাংশ তা প্রস্তাবে নির্দিষ্ট করেনি। মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব নিয়ে তারা আগে এসেছিল। তখন আমরা বলেছি, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের খরচ যেন তারা দেয়। নয়ত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর যদি প্রকল্প না হয়, তাহলে আমাদের সরকারের টাকা বিনা কারণে খরচ হয়ে যাবে। পরে তারা এই প্রস্তাব নিয়ে আসে সম্প্রতি। এখন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের খরচও তারা দিতে রাজি।

টাউনশিপ নির্মাণে কত টাকা খরচ হবে, সে বিষয়েও প্রস্তাবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই বলে জানান এই সিডিএ কর্মকর্তা। চীনের কোন চারটি কোম্পানি যৌথভাবে মেট্রোরেল ও টাউনশিপ প্রকল্পের এই প্রস্তাব দিয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে চাননি প্রধান প্রকৌশলী।

তবে গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসিএল) নামে যে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, তারাও এ কনসোর্টিয়ামে আছে বলে সিডিএ-এর একজন জানিয়েছেন।