ওমরা শব্দের আভিধানিক অর্থ ভ্রমণ করা। শরিয়তের বিধান মতে, ওমরার নিয়ম হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সুন্নত বা নফল ওমরা পালনের নিয়ত করে হজের মতো ‘মিকাত’ তথা ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত জায়গা থেকে বা তার আগেই ইহরামের নিয়ত করতে হয়।
ইসলামের শুদ্ধতম ইবাদতগুলোর মধ্যে একটি ওমরাহ্। প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মুসলিম ওমরাহ্ পালন করতে মক্কা নগরীতে পাড়ি জমায়। ওমরাহ্ পালনের ক্ষেত্রে অনেকেই সন্দিহান থাকেন এই ভেবে-কীভাবে কী করবেন। এখানে ওমরাহ্ এর মূল বিষয়গুলোর ওপর সহজভাবে আলোকপাত করা হলো।
ওমরাহ পালনে প্রধানত চারটি কাজ। দুইটি কাজ ফরজ— (ক.) ইহরাম পরিধান করা। (খ.) পবিত্র কাবাগৃহ তাওয়াফ করা। আর দুইটি কাজ ওয়াজিব— (ক.) সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সাঈ করা। (খ.) মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা।
ইহরামের অর্থ হারাম বা নিষিদ্ধ করা। মূলত হজ্জ্ব বা ওমরাহ্ এর নিয়ত করে তালবিয়্যাহ পড়ার এই নিয়মকেই বলে ইহরাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকদের ইহরাম (পুরুষদের জন্য সাদা দুটি চাদর ও মহিলাদের জন্য পছন্দ মতো) বাঁধার জন্য আলাদা আলাদা স্থান আছে। বাংলাদেশীদের জন্য মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধার নিয়ম। ইহরাম ছাড়া মিকাত অতিক্রম করা নিষেধ। বাংলাদেশী হাজিরা সাধারণতঃ হাজি ক্যাম্প হতে ইহরাম বেধে আসেন। জেদ্দা বিমান বন্দরের বাহির গেটের সামনে মসজিদ আছে সেখানে ইহরাম বাধার জন্য গোসলসহ সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
ইহরামের কাপড় পরিধান করে ২ রাকাত ইহরামের সুন্নত নামাজ আদায় করুন। নামাজের পরপরই জায়নামাজে বসেই ওমরাহ এর নিয়ত করা ভাল।
কাবাঘরের তাওয়াফ করা
পবিত্র কাবাগৃহ সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলা হয়। ওমরাহর উদ্দেশ্যে মসজিদে হারামে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করে এ দোয়া পড়া—উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আউজু বিল্লাহিল আজিম ওয়া বি-ওয়াজহিহিল কারিম, ওয়া সুলতানিহিল কাদিম; মিনাশ শায়তানির রাজিম। আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।’
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এক ওমরাহ অন্য ওমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সবকিছুর কাফফারা। আর মাবরুর হজের একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। (বুখারী ও মুসলিম)
দু'আ কবুলের স্থানসমুহ
(১) মাতাফ তথা তাওয়াফের জায়গায়, (২) মুলতাজাম বা কাবা ঘরের দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান, (৩) মীযাবে রহমত বা কাবা শরীফের ছাদের পানি যে স্থান দিয়া নিচে পরে সে স্থান (হাতিমের মধ্যে), (৪) যমযম কুয়ার কাছে, (৫) মাকামে ইবরাহীম অর্থাৎ হযরত ইবরাহীম আ. এর পদচিহৃ যেখানে সংরক্ষিত আছে তার পিছনে, (৬) সাফা-মারওয়া পাহাড়ের উপর, (৭) রোকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে, (৮) মিনার ময়দানে (৯) আরাফাতের ময়দানে, (১০) জাবালে রহমতে, (১১) মুজদালিফার ময়দানে, (১২) জাবালে নূর যেখানে পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছিল, (১৩) জাবালে সওর যেখানে প্রিয় নবী সা. হযরত আবু বকর রা.কে নিয়ে অবস্থান করেছিলেন, (১৪) জাবালে ওহুদ যেখানে ওহুদের যুদ্ধ হয়েছিল এবং প্রিয় নবীজি সা. এর দন্ত মোবারক শহীদ হয়েছিল, (১৫) দারে আরকাম যেখানে হযরত ওমর রা. ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, (১৬) জান্নাতুল বাকী ও জান্নাতুল মোয়াল্লা যে কবরস্থানদ্বয়ে প্রিয় নবীজির সাহাবায়ে কেরাম, আওলাদে পাক, আযওয়াজে মুতাহ্হারা , শুহাদায়ে কেরাম শুয়ে আছেন ও অন্যান্য পবিত্র স্থান সমুহ। সবিশেষে দুআ করি আল্লাহ যেন আমাদেরকে হজ্জে মাবরুর দান করেন। আমীন।
ওমরাহ পালন করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল। এটি পুরুষ ও মহিলা সবার জন্য প্রযোজ্য। ওমরাহ করলে হজ ফরজ হয়ে যায় এরূপ কোনো বিধান নেই। ওমরাহ সম্পর্কে কোরআন করিমে রয়েছে, ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলির একটি; তাই যারা হজ করবে বা ওমরাহ করবে, তারা এ দুটি প্রদক্ষিণ (সাঈ) করবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৮)।
লেখক পরিচিতি
কলামিষ্ট ও সাহিত্যিক ,জেদ্দা, সৌদি আরব থেকে।
0578019055 , yousufarmancox@gmail.com