সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
“টেকসই আগামীর জন্য চাই লিঙ্গ সমতা । লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠিত হলেই নারী অধিকার নিশ্চিত হবে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নারীরা অস্বাভাবিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিসিসিএডি) পরিচালক ড. সালেমুল হক।
‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২২’উপলক্ষ্যে রবিবার (০৬ মার্চ, ২০২২) 'জেন্ডার ইকুয়ালিটি টুডে ফর এ সাসটেইনেবল টুমরো' এ আন্তর্জাতিক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত 'উইমেন ব্রেকিং বায়াসেস ফর ক্লাইমেট জাস্টিস' শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন "নারীদের প্রতিনিধিত্ব, আর্থ-সামাজিক দায়িত্ববোধ, মতামত প্রদানের দক্ষতা, পরিবেশ সংক্রান্ত জ্ঞান এবং প্রতিকূলতাসমূহ দ্রুত পরিবর্তনশীল জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত অভিযোজন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও ২০১৫ সালের জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে জলবায়ু কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে দেশগুলো একটি চুক্তিতে আসার পর থেকে বিশ্বজুড়ে নারীদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলেও জানান তিনি। সমস্যা সমাধানে তরুণ-তরুণী, বিজ্ঞানী, গবেষক, বহুজাতিক কোম্পানীর মালিকসহ সকল নাগরিকদের এ বিষয়ে সচেতন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এসময় তিনি নিজেদেরকে এখন থেকে ‘পৃথিবীর নাগরিক’হিসেবে সবার সাথে মিলে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আহবান জানান।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. মাহবুবা নাসরীন বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় যখন কোনো সম্প্রদায়কে আঘাত করে, তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারীরা। গবেষণায় দেখা যায়, এসময় নারীদের মানসিক চাপ বাড়ার পাশাপাশি নারীর বিরুদ্ধে সকল ধরনের সহিংসতা, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি বেড়ে যায়। তিনি নারীদেরকে নেতৃত্ব প্রদান, সিদ্ধান্তগ্রহন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
ফ্রেন্ডশিপ-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক রুনা খান বলেন "জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি পৃথিবীর জন্য একটি বড় হুমকি। এর ফলে তরুণ তরুণীরা যথেষ্ট ভালনারেবল পরিস্থিতির স্বীকার হয়। চরে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষই ক্লাইমেট মাইগ্রেন্ট। চরভাঙ্গনে প আশাহত লাখ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরে। তথাপি, বাংলাদেশের নারীরা নানা প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও তাদের নিজেদের ক্ষমতায়নের ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জরুরী পরিস্থিতিতে দক্ষতার সাথে সাড়া প্রদানের নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আসছে।’’
এ প্রসঙ্গে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, “বাংলাদেশের নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে পুরুষদের তুলনায় বেশী প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। কেননা যে কোন সংকটের সময় নারী দে র উপর যৌন হয়রানি, বিদ্যালয় থেকে মেয়ে শিশু ও কিশোরীদের ঝড়ে পড়া ও বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে সম্পর্কিত স্থানচ্যুতি ও অভিবাসনের কারণে নারীদের উপর পারিবারিক দায়িত্বের বোঝা বৃদ্ধি পায়। এত চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারীরা এসকল ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনি আরও বলেন একশনএইড বিশ্বব্যাপী নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবেলা করে লিঙ্গ বৈষম্য মোকাবেলায় কাজ করে এবং লিঙ্গভিত্তিক ন্যায়বিচার অর্জনে নারীর রাজনৈতিক ও নাগরিক অংশগ্রহণকে সমর্থন করে।
ওয়েবিনারে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম; বিশ্বব্যাংক গ্রুপের জেন্ডার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং যোগাযোগ পরামর্শক জাফরি হুসেন; তসলিমা আক্তার, প্রজেক্ট ম্যানেজার, একশনএইড বাংলাদেশ; নুজুলী বেগম, প্রোটেকশন লিড, রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স, একশনএইড বাংলাদেশ।
ওয়েবিনারে বক্তারা একদিকে প্রান্তিক নারীদের সাহসিকতা, সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। বক্তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের নারী নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৃণমূল নারী ও তরুণ নারী নেত্রীরাও লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং জরুরী প্রতিক্রিয়া সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
এই ওয়েবিনারে চার তৃণমূল নারী নেত্রীকে 'ষোড়শ নাসরীন স্মৃতি পদক-২০২২' প্রদান করা হয়। এ বছর গাইবান্ধার শাহানাজ বেগম মুক্তি (৪৬); জামালপুরের মিনি আক্তার (২১); বগুড়ার নাইস আক্তার (৩৪); বরিশালের শাকিলা ইসলাম (২৭) যথাক্রমে কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবেলায় নারী; যৌন হয়রানি এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী নারী; অনলাইন ব্যবসায় উদ্যোক্তা নারী ও তার সাফলতা; স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নারীদের অবদান এই চার ক্যাটাগরিতে চারজনের বিশেষ অবদানের কথা বিবেচনা করে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা শেষে তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম কান্ডারী নাসরীন পারভীন হক স্মরণে ২০০৭ সাল থেকে ’নাসরীন স্মৃতি পদক’প্রদান করে আসছে একশনএইড বাংলাদেশ। ২০১৩ সাল থেকে ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইউবিকো) এ পদকপ্রদানে সহায়তা করে আসছে।
এই ওয়েবিনারে ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইউবিকো) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এম মোস্তফা বিলাল; নারীপক্ষের শিরীন পি. হক; জেএনএনপিএফ-এর চেয়ারপার্সন মমতাজ আরা বেগম এবং অন্যরা নাসরীন পারভিন হক এবং তার দীর্ঘ কর্মজীবন, অর্জন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
পরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নারী নেতৃত্ব ও অভিনব কৌশল বিষয়ের আলোকে একটি ভার্চুয়াল ফটো প্রদর্শনী; তৃণমূল নারী নেত্রীদের অর্জনের উপর তথ্যচিত্রের; এবং বিশ্বের বিভিন্ন মৌলিক উপাদানের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে হ্যাপি হোম এর মেয়েরা রূপক উপস্থাপনাধর্মী একটি নাটিকা পরিবেশনা করেন।