- বদরুল ইসলাম বাদল
পচাত্তরের বঙ্গবন্ধু হত্যা ছিল একটি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এবং পরাজিত শত্রুদের প্রতিশোধ, সাম্রাজ্যেবাদী গোষ্ঠীর প্রতিহিংসার নগ্ন সন্ত্রাস, বিশ্ব আর্ত নিপীড়ন মানুষের বলিষ্ঠ কন্ঠের নিঃশেষ করার পায়তারা । শোষিত মানুষের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদী শক্তিগুলোর দাপড়ের মহড়া।দেশীয় সুবিধাবাদী সুযোগ সন্ধানী শকুনের গাপটি মেরে বসে থাকা থেকে বেরিয়ে আসার সুদূর পরিকল্পনার অধ্যায় ।সর্বোপরি সদ্য স্বাধীন দেশের স্বাধীনতার পৃষ্ঠে ছুরিকাঘাত। বাঙ্গালী জাতির লজ্জাজনক অধ্যায় হল পনের আগষ্টের পর থেকে ছিয়ানব্বই পর্যন্ত দীর্ঘ একুশ সাল। স্বাধীনতার মহানায়কের নাম নেয়া নিষিদ্ধ ছিল, প্রচার নিষিদ্ধ,হত্যা কান্ডের বিচারের পথ আইনের মাধ্যমে রুদ্ধ হয়। হত্যাকারীদের বীরদর্পে উল্লাস এবং জেনারেল জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়া কতৃক রাষ্টীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হত্যার সাথে জড়িতদের পুরস্কৃত হয়। সেই সময়ে হাজার বছরের ঐতিহাসিক অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাঙ্গালী সংস্কৃতির উপর চলে কুঠারাঘাত।একই দিনে দেশের সব জেলায় একসাথে বোমা নিক্ষেপ। প্রগতিশীল চিন্তার নেতা, বুদ্ধিজীবীদের উপর হামলা,এবং হত্যা করা হয়। সবই দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ।আওয়ামী লীগের তথা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির ধূলিসাৎ করতে সব কৌশল অকৌশল করে পচাত্তরের পরের সরকার। কিন্তু ইতিহাসের পরিক্রমা থেমে থাকে না।প্রকৃতি তার নিয়মে চলে আপন গতিতে। অসত্যের ওজন অনেক ভারী।সত্য -মিথ্যার দ্বন্দ্বে ষড়যন্ত্রকারী আপনা আপনি হুছুড় খেয়ে বিষদাঁত ভেঙে পড়ে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় আসার পর সব দৃশ্যপট বদলে যায়। উন্মোচিত হতে থাকে ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের নিগুঢ় রহস্য ।বের হয়ে আসতে থাকে ষড়ষন্ত্রের সব কূটচাল।পরাজিত শক্তি, সাম্রাজ্যবাদী যড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় হাজার বছরের বাঙ্গালী জাতির স্বনির্ভরতার মর্যাদা বিশ্ব দরবারে পুনঃ ফিরে আনতে সম্ভব হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে।
জাতির সৌভাগ্যের বিষয় যে, মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী একই সাথে উদযাপনে ইতিহাসের সাক্ষী বর্তমান প্রজন্মের।নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু আদর্শের একনিষ্ঠ যোদ্ধা প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ রাষ্ট্র প্রধান। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা সরকার প্রধান।নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে সরকার গঠনের পর, যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যকর, জাতির পিতা হত্যার বিচার, জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদের ভিত্তি সমুলে উপড়ে ফেলেন। জবাব সহ আজ অর্থনীতির ভিত্তি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যানে প্রসংশিত।এক বাক্যে মুজিব বর্যের তাত্ত্বিক গুরুত্বের কথা বলতে হলে বলা যায় যে,মুজিবাদর্শকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছাতে। আর তার সালে সহায়ক ভূমিকা পালন করে স্বাধীনতার পন্চাছ বছরের পূতি। কিন্তু আজকের এই সময়ে মুজিব বর্যের শেষের দিকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,সরকার ঘোষিত লক্ক উদ্দেশ্য কতটা সফল।নব্বই দশকে উত্তাল রাজনৈতিক সময়ে কর্মীদের হাতে কলমে রাজনৈতিক পাঠ দেয়া হতো। দলীয় আদর্শ নিয়ে ক্লাস হতো।বিপক্ষীয় দলের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হতো। আওয়ামী রাজনীতির আদর্শের সাথে অন্য দলের নীতির তুলনামূলক আলোচনা হত।সাম্রাজ্য,সাম্প্রদায়িক, পুঁজিবাদ সমাজবাদ সহ আমাদের দেশের মানুষের মানষিক মনের সাথে আদর্শের রাজনীতি পর্যালোচনা হতো।কিন্তু এখন? নেতার সমাহার, সবাই মুজিব সেনা,কিন্তু নেতা বা নেত্রী কে?হয়তো মুখে বলে শেখ হাসিনা কিন্তু মনের মধ্যে তা নয়।স্বার্থ যেখানে, হালুয়া রুটি যে নেতাদের মাধ্যমে হবে সেই নেতা। মুজিব কোট পরিধানের মুজিব সৈনিক হওয়া যায় না। কক্সবাজারের মুজিব কোটের নুরুল ইসলাম সাহেব সাহেব এবং আজকের মুজিব কুটের পরিহিত দের তুলনা করলে তা বুঝতে পারা যাবে।
আওয়ামী লীগ সরকার।জেলা উপজেলায় নেতায় নেতার ভরপুর। ইউনিয়ন ওয়াডে নেতা শুধু নেতা।পচাত্তরের পর ছিয়ানব্বই পর্যন্ত কর্মী খুজে পেতে অনেক কষ্ট হতো। কিন্ত আজকাল দলীয় কর্মসূচিতে নেতাদের উপস্থিতি লক্ষনীয়ভাবে। জনসভায় কিংবা আলোচনা হয় না দলীয় কর্মসূচি, ব্যাখা করা হয় না মুজিববাদ।তুলনামূলক বিশ্লেষণ হয় না প্রতিপক্ষের আদর্শ। শুধু তির্ষক সমালোচনা, মিটিংয়ে দেখা যায় সব নেতাদের একই সুর প্রতিপক্ষের কে আক্রমণ, সমালোচনা। প্রতিপক্ষ মানে বি,এন,পি জামাত সহ অন্য দল এবং নিজের দলের মত-পথের অমিল নেতাদের ই সমালোচনা। সাধারণত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিরুধী বল এবং দলে ঘাপটি মেরে বসে থাকাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হয়। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ দলের আদর্শ নিয়ে আলোচনা শুনবার আগ্রহ বেশি থাকে।
মুজিব বর্যে মুজিব আদর্শ প্রচারে কতটা সফল তা ব্যাখ্যায় গেলে মুজিব বর্যের লক্ষ্যের সাথে বিস্তর ফারাক দেখা যাবে। শুধু মাত্র আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া গুণগত গঠনগত কোন লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। জনসভা কর্মীসভা ইত্যাদিইত্যাদি মিটিং এ কি পরিমাণ মুজিব চর্চা শেখানো যায় যায়।তা সবাই জানে। যদি বিবেকের কাছে প্রশ্ন করা হয়,মুজিব বর্যে মুজিব চর্চা নিয়ে কোন প্রশিক্ষন কিংবা কর্মীদের নিয়ে কোন সভা হয়েছে কিনা।কোন প্রকাশনা হয়েছে কিনা।কোন পুস্তিকা বিতরণ লিখন হয়েছে কিনা।কোন মুজিব বিশারদ নিয়ে মুজিব বর্য পাঠ হয়েছে কিনা।বঙ্গবন্ধুর লেখা বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী কর্মীদের ঘরে আছে কিনা।দলীয় অফিসে রাজনৈতিক বই আছে কিনা, নিয়মিত পত্রিকা অফিসে যায় কিনা। সব চেয়ে আফসোস হল উপজেলা ইউনিয়নে দু'একটা ছাড়া কোথাও দলের অফিস নাই। নেতাদের ব্যক্তিগত অফিসের অভাব নাম। কিন্তু দলের কর্মীদের স্বাধীন ভাবে বসার জন্য কোন জায়গা নাই। নেতার অফিসে বসে নেতা চর্চা হয় দল চর্চা নয়।ছোয়াত্তর বছরের পুরানো দল একটানা তিন মিয়াদের ক্ষমতায় থাকার পরও কর্মীদের বসার জায়গা পড়ার জন্য চর্চা করার মতো বই নাই। মুজিব বর্যে নিয়ে পর্যালোচনা করলে বলা যায় সরকার ঘোষিত কর্মমুখী সফলতা কতটুকু হয়েছে। তবে কক্সবাজার জেলা ছাত্র লীগ পরিবার কে সাধুবাদ জানাই তাদের নেতৃত্বে তর্জনী নামক একটি প্রকাশনার জন্য। জেলা ছত্রলীগ সভাপতি মারুফ আদনান এবং সাধারণ সম্পাদক অপরিসীম পরিশ্রমের। তর্জনী প্রকাশনার সাবেক ছাত্র নেতা মানিক বৈরাগীকে ও কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। তিনি স্বৈরাচার সাম্প্রদায়িক বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের নির্যাতিত কারা নির্যাতিত এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তি গোষ্ঠীর হাতে অত্যাচারিত নেতা।মুজিব বর্যে এরকম নেতা কর্মী অনেক আছে। মুজিব বর্যে এদের বর্তমান নেতৃত্ব কতটুকু সহানুভূতি প্রদর্শন করেছে,এবং মনে রেখেছে তা খতিয়ে দেখলে বুঝা যাবে।
মুজিব বর্যে কক্সবাজার জেলাধীন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দ্বিধা বিভক্তি নেতা-কর্মীদের হতাশ করেছে।সাতই মার্চের হতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে নেতাদের বিভাজন আওয়ামী ঘরনা এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের আশাহত করেছে।আজম খান নামীয় একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, সাতই মার্চ হল ঐক্যের মোহন সুর। আর সেই দিনটি চকরিয়া রাজনৈতিক বিভাজন মেনে নেয়া যায় না। ব্যক্তিদন্ধ আক্রোশ বড়দলে থাকতেই পারে।আত্মসমালোচনায় আত্মশুদ্ধির সুযোগ আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘদিন শেখ হাসিনা নির্বাসিত ছিল। পছাত্তরের পর আওয়ামী রাজনীতিতে কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যন্ত দলের মাঝে অস্থিরতা অবিশ্বাস এবং কোন্দল নিয়ে। সে সময় দলের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মতে শেখ হাসিনাকে সভাপতির পদে আসীন হওয়ার জন্য আহ্বান করা হলে,বঙ্গবন্ধু তনয়া যে মেসেজ টি দলকে দিয়েছেন তা হল।দলের ঐক্য এবং আত্মসমালোচনা করার জন্য।দলের বৃহত্তর স্বার্থে সভাপতির সে উপলব্ধি টি কি চর্চা করা যায় না? দলের মধ্যে বক্তি বড় নয়,দলের সুনাম অর্জন সফলতা ব্যক্তি সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু আদর্শের সব নেতাকর্মীদের সে কথা বিশ্বাস এবং মেনে নিতে হবে। আর যারা বিশ্বাস করে না তাদের নিয়ে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে যেব দলের নেতা কর্মী ভিভান্ত না হয়।
অনেক ত্যাগী নেতাদের পরিশ্রমের ফল আজকের চকরিয়ার রাজনীতি। মাষ্টার আবদুল মালেক, নুরুল আলম চেয়ারম্যান, নুরুল কাদের বি কম সহ এডভোকেট আমজাদ হোসেনদের হাত ধরে শুন্য থেকে শাখা পল্লব নিয়ে আজকের চকরিয়ার আওয়ামী রাজনীতি। শহীদ দৌলত খানের রক্ত মিশে আছে চকরিয়া আওয়ামী রাজনীতির সাথে। তাই আজএকজন এডভোকেট আমজাদ হোসেন দরকার। যিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং ভালবাসা নিয়ে সকল বুলবুঝির নিরসনে এগিয়ে আসবে। তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাহস যোগাবে,রাজনীতির মাঠে থাকবে সুস্থির রাজনীতির চর্চা। দলবাজি দখলবাজী,টেন্ডারবাজী,রাজনৈতিক সুবিধাবাদী নেতাদের গলাবাজি থেকে একজন এডভোকেট আমজাদ হোসেন সামনে এগিয়ে আসা দরকার। সরকার ক্ষমতায় বলে উল্লাসের কোন সুযোগ নাই।রাজনীতির মাঝে শেষ কথা বলতে কিছুই নাই।আওয়ামী বিরোধী সংগঠন আওয়ামী রাজনীতির বর্তমানের হাল চিত্র দেখে আওয়ামী বিরুধী সংগঠন সমূহ স্বস্তিবোধ করছে। হাসছে। তাই সচেতন মহল চকরিয়া তথা আওয়ামী পরিবারের সব বিভাজন সমস্যার সম্মানজনক সমাধান চায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের মতামতে আওয়ামী রাজনীতির বর্তমানের অবস্থার জন্য দায়ী করেন, নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক শিক্কার অভাব।