দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার:
কক্সবাজার জেলা সদরসহ উপজেলাগুলোর বিভিন্নস্থানে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। সেলু মোটর (গভীর নলকূপে) কিছুটা পানির দেখা মিললেও অগভীর নলকূপ গুলো প্রায়ই অকেজু হয়ে পড়েছে। কোন কোন স্থানে অগভীর নলকূপ গুলো থেকে মোটেও পানি উঠছে না। কিছু কিছু নলকূপে পানি উঠলেও তা ব্যবহারযোগ্য নয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই সংকট প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ নলকূপই অগভীর। সংসারের খরচ মিটিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠির পক্ষে গভীর নলকূপ স্থাপন করা অনেকটা দূরহ হয়ে উঠে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। বিশুদ্ধ পানি সংকটের কারণে বিভিন্নস্থানে পান করা হচ্ছে পুকুর কিংবা জলাশয়ের পানি। যার ফলে ডায়রিয়া, এলার্জিসহ নানা রোগ ব্যাধীতে ভূগছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া অনেক খাল, নদ-নদী, জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ার ফলে চাষাবাদে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকেরা।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, জেলার নিকটবর্তী উপজেলা রামুর মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম, পাড়া ও মহল্লার কোন অগভীর নলকূপে মোটেইও পানি উঠছে না। বিশুদ্ধ পানি নিয়ে তারা চরম সংকটে পড়েছেন। ঘরে ঘরে রোগ ব্যাধী ছড়িয়ে পড়েছে। এব্যাপারে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তাতে অবহিত করা হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগি এলাকাবাসি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হুদেচ্ছা বেগম রিনা জানান, আমার ইউনিয়নের অগভীর নলকূপ গুলোতে মোটেও পানি উঠছে না। এলাকাবাসি আমাকে জানানোর পর আমি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বিশুদ্ধ পানিয় জলের সংকটের কথা জানিয়েছি।
৪নং ওয়ার্ড পূর্ব উমখালীর মীর আহমদ এর ছেলে পল্লী চিকিৎসক মো: আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, বিগত ৩/৪ মাস ধরে কোন নলকূপে পানি উঠছে না। এমনকি নোয়াখাল, পানের ছড়া, বলী পাড়া খাল, খরইল্লা ছড়া খালসহ অনেক জলাশয় শুকিয়ে গেছে। যার ফলে গৃহ পালিত পশুরাও পানি পান করতে পারছে না। ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, এলার্জিসহ নানা রোগ লেগে আছে। ৪০/৭০ ফুটের গভীরে যে নলকূপগুলো আছে সেগুলো থেকে কিছুটা পানি আসলেও তা ব্যবহার অনুপযোগি। নিরুপায় হয়ে আয়রণে ভরা এই পানি ব্যবহার করে রোগে ভোগা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই।
৫ নং ওয়ার্ড পানের ছড়ার বাসিন্দা জাফর আলম ও কবির আহমদ জানালেন, দীর্ঘ ২/৩ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে অন্য ইউনিয়নে গিয়ে বিশুদ্ধ পানির তৃঞ্চা মিটাতে হচ্ছে। বড় কষ্ঠ হচ্ছে পানি নিয়ে। ধান চাষ দিয়েছিলাম প্রায় ১ একর। তৎমধ্যে পানির অভাবে ফলন ঘরে তোলার আগে অধিকাংশই মরে গেছে। এনজিও থেকে লোন নেওয়া টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো তা নিয়ে খুবই চিন্তায় আছি।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ঋতিক চৌধুরী বলেন, শুস্ক মৌসুমে সাধারণত পানির স্তর নিচে নেমে যায়। যার ফলে অগভীর নলকূপ গুলোতে পানি উঠে না। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবকিছুরই পরিবর্তন ঘটছে। আয়রণ/আর্সেনিক যুক্ত পানি যেন কোথাও পান না করে এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। এছাড়া আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলো চিহ্নিত করে রেডমার্ক করা হয়। যেন ব্যবহার করতে না পারে।
এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন, যেসব এলাকাগুলোতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে, তা সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।