জালাল আহমদ , ঢাবি প্রতিনিধি:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অধ্যয়নরত বাংলাদেশের পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত কক্সবাজার জেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘কক্সবাজার স্টুডেন্টস ফোরাম’-এর কমিটি গঠন নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। একটি দুইটি কমিটি নয় ,পাল্টাপাল্টি পাঁচটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।

গত রোববার (৩ এপ্রিল) রাতে সদ্য সাবেক সভাপতি নোমান পারভেজ শাহ ও সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিরাছ উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সালমান সাদিককে সভাপতি ও আরফাতুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই জনের বাড়ি চকরিয়া পৌরসভায়।

পরের দিন (৪ এপ্রিল) রাতে এই কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে আরেকটি নতুন কমিটি গঠন ঘোষণা করেন নিজেদের উপদেষ্টা দাবি করা ফোরামের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষার্থী। সেখানে সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে আইন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেদুর রহমান রাসেল কে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইমুন ইসলাম বাপ্পি কে । রাসেলের বাড়ি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলায় এবং বাপ্পীর বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায়।

কমিটি গঠন নিয়ে দু’পক্ষ অভিযোগ তুলে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন। ফোরামের সদ্য সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বলছেন, সবার সাথে আলোচনা করেই কমিটি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় কমিটিটা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত হয়ে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে অন্য আরেকটি কমিটি অনুমোদন দেওয়া সিনিয়র শিক্ষার্থীরা বলছেন ,বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেদের স্বার্থে অছাত্রদের নিয়ে কমিটি দিয়েছেন। কোনো শিক্ষার্থী এই কমিটি না মানায় তারা আরেকটি কমিটি দিতে বাধ্য হয়েছেন।

এছাড়াও আরো তিনটি কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেস রিলিজ আকারে প্রকাশ করা হয়। যদিও সেখানে কারো স্বাক্ষর নেই। বলা হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ থেকে এই তিনটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, এসব কমিটির আদৌ কোনো কাজ নেই। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত নেতারাই পদ নিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে এবং নিজেদের স্বার্থে পদ ব্যবহার করে। বছরে একটা নবীনবরণ এবং পদ পাওয়ার পর নেতাদের সাথে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো কাজ করেন না তারা।

পাল্টাপাল্টি কমিটি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় বিরক্ত এবং কমিটি নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সদ্য সাধারণ সম্পাদক মিরাছ উদ্দীন প্রথমত আমাদের কোনো উপদেষ্টা কমিটিই নেই। সবার সাথে আলোচনা করেই আমরা কমিটি ঘোষণা করেছি। পরবর্তীতে নিজেদের উপদেষ্টা দাবি করে যে কমিটি দেওয়া হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ভূয়া এবং নিয়মবহির্ভূত।
নোমান- মিরাছ ঘোষিত কমিটির সভাপতি সালমান সাদিকের ছাত্রত্ব নাই।
তার নিজ ডিপার্টমেন্ট শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অফিসে যোগাযোগ করে জানা যায় , সালমান সাদিক ২০১৫-১৬ সেশনে ভর্তি হয়েছিল।তার রোল নাম্বার ২৪। কিন্তু তিনি প্রথম বর্ষের গন্ডি পেরোতে পারে নি।

ছাত্র ফোরামের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবছার হাসান রানা জানান, কক্সবাজার স্টুডেন্ট’স ফোরামের সাধারণ সদস্যদের মতামত কে উপেক্ষা করে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নির্দলীয় সংগঠনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংগঠনের উপদেষ্টাদের মতামতের ভিত্তিতে ত্যাগী , নিবেদিত এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে রাসেল রহমান ও সাইমুন ইসলাম বাপ্পীর নেতৃত্বে কমিটি ঘোষণা করা হয়। আমি আশা করি , তাদের নেতৃত্বে এই সংগঠন বহুদূর এগিয়ে যাবে।

উপদেষ্টা দাবি করা সেলিম উল্লাহ সুজন‌ বলেন, কারো সাথে কোনো আলোচনা না করে ওই কমিটিটা ঘোষণা করা হয়েছে। সভাপতি যাকে দেওয়া হয়েছে তার কোনো ছাত্রত্ব নেই। আমরা যাদের কমিটিতে রেখেছি সবাই নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং সবার সম্মতিতে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম যে কমিটি দেওয়া হয়েছে সেটা শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছে, আমাদেরটা সবাই গ্রহণ করেছে। সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ তুলেন তিনি।

নবনির্বাচিত সভাপতি আইন বিভাগের ছাত্র রাসেদুর রহমান রাসেল বলেছেন, আমি ২০১৬-১৭ সেশনে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম।পরে পুনঃ ভর্তি হয়েছি।এখন ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে ক্লাস করেছি। ফোরামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে দীর্ঘদিন ধরে সময় দিয়েছি। সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে চাই।

আরেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ মুনতাসির বলেন, সদ্য বিদায়ী সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রথম যে কমিটি দিয়েছিল তারা কারো সাথে কোনো আলোচনা করেনি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের এই কমিটি না মানায় আমরা সবার সাথে আলোচনা করে নতুন কমিটি দিতে বাধ্য হয়েছি। কক্সবাজারে যেখানে ৯টি উপজেলা আছে সেখানে একটা উপজেলার একটা ওয়ার্ড থেকেই দুইজন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা কোনভাবেই সমীচীন নয়।