এস.এম.জুবাইদ,পেকুয়া:
উপকূলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাই সন্ধ্যা নামার আগেই এক কিলোমিটার দূরের নলকূপে গিয়ে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে ভিড় করছেন এলাকার গৃহবধূ থেকে শুরু করে ছেলে মেয়েরা। এমন দৃশ্যের দেখা মেলে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের বাজার পাড়া গ্রামে। কিন্তু প্রত্যকটি ঘরের আশপাশে নদী-খালে অথৈ জল। তার একফোঁটাও ব্যবহারোপযোগী নয়। তা লবণাক্ত, নয়তো দূষিত। নিজেদের নলকূপে পানি উঠছে না প্রায় দুই বছর। তাই পানি সংগ্রহ করতে গ্রামের অপর প্রান্তে গিয়েছেন মগনামা ইউনিয়নের বাজার পাড়া গ্রামের গৃহবধূ শাহনাজ আক্তার।
সরেজমিনে দেখা যায়, মগনামা ইউনিয়নের বাজার পাড়া গ্রামে নিজের নলকূপে কম্প্রেশার মেশিনের মাধ্যমে সুপেয় পানি তুলছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সালাহউদ্দিন আহমদ। নিয়ম করে তিনি প্রতিদিন সকাল-বিকেল প্রতিবেশীদের পানি দেন। সেখানেই শাহনাজ আক্তারের মতো অন্তত একশত জন নারী-শিশু সারিবদ্ধভাবে পানি সংগ্রহ করেন।
এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, গ্রামের ২০টি নলকূপে পানি উঠছে না। নিজের নলকূপে কিছুদিন বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে পানি তোলা গেলেও এখন তা কাজ দিচ্ছে না। তাই তিনি নলকূপে অর্ধলক্ষ টাকা ব্যয়ে কম্প্রেশার মেশিন স্থাপন করে পানি তুলছেন। এতে নিজের এবং প্রতিবেশীদের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হচ্ছে।
গৃহবধূ শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘সুপেয় পানির এই সংকট যেন কলসি আর পানির পাত্রের সারির মতো দীর্ঘ না হয়। সে লক্ষ্যে আমরা সরকারি উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।’
পেকুয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নের ৫৭টি গ্রামে অন্তত ৪ হাজার ৭০০টি গভীর-অগভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার নলকূপে পানি উঠছে না। বোরো মৌসুমে সেচের জন্য ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের গভীর নলকূপ (সাব মার্সিবল পাম্প) যত্রতত্র বসানো ও অনাবৃষ্টির কারণে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। বোরো মৌসুমে এই তিন ইউনিয়নে অন্তত দুইশটি গভীর সেচপাম্প চলে।
উজানটিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন জানান, উপকূলের পেকুয়া উপজেলার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নের নলকূপ যে স্তরে বসানো হয়েছে, সে স্তরে সুপেয় পানি মিলছে না। এই স্তরে তিন ইউনিয়নের অধিকাংশ নলকূপ (দেড় থেকে তিন ইঞ্চি ব্যাসের) স্থাপন করা হয়েছে। তাই মানুষ সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। তবে, একই স্তরের দশ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের পাম্পে পানি পাওয়া যাচ্ছে।
মগনামা ইউনিয়নের মুহুরী পাড়া গ্রামের বাসিন্দা পারভেজ উদ্দিন নিশান জানান, চারপাশের নদী-খালে সব লবণাক্ত পানি। যা নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার অনুপযোগী। নলকূপে পানি সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ জলাশয় ও ডোবার পানি ব্যবহার করছেন। এতে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ।
রাজাখালী ইউনিয়নের আমিলা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও পল্লী চিকিৎসক মো. শফিউল্লাহ বলেন, ‘সুপেয় এবং নিরাপদ পানি সংকটের কারণে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যদিও সেটা তারা উপলদ্ধি করতে পারছে কম। প্রাণঘাতী না হলেও এতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।’
এদিকে মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী বলেন, ‘দুটি বরফকল, সেচ প্রকল্প ও নির্মাণাধীন সাবমেরিন নৌঘাঁটিতে অপরিকল্পিতভাবে গভীর নলকূপ স্থাপনের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তাই, সঠিক পরিকল্পনায় নলকূপ স্থাপনে সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন দরকার। নয়তো এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। বরং দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় রূপান্তরিত হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জয় প্রকাশ চাকমা বলেন, ‘উপকূলীয় তিন ইউনিয়নের অগভীর নলকূপ যে স্তরে বসানো হয়েছে, গ্রীষ্মকালে সে স্তরে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। মৌসুমের তিন চার মাস এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ভবিষ্যতে সাব মার্সিবল পাম্পসহ নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতে সুপেয় পানির সমস্যা নিরসন হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।