ইমাম খাইর #
মোরশেদ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা ও হত্যাকারী মাহমুদুল হক। পানির সেচ প্রকল্পের জেরে এমন নৃশংস ঘটনা সে নিজেই ঘটিয়েছে। সঙ্গে ভাই নুরুল হক, মোহাম্মদ আলী প্রকাশ মোহাম্মদ, ছেলে মোঃ আবদুল্লাহ ও মোঃ আজিজ জড়িত। এখানে কোন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ইউসুফ এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। আর ছায়াতদন্ত শুরু করে র‍্যাব। ১৫ এপ্রিল ভোর ৪টার দিকে টেকনাফে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে মাহমুদুল হকসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছেন এজাহার নামীয় ২ নং আসামি মোহাম্মদ আলী প্রকাশ মোহাম্মদ ও ৪ নং আসামি মোহাম্মদুল হক ওরফে মাহমুদুল হক। হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

১০ নং সেচ স্কিম পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে এলাকার প্রতিবাদী যুবক মোরশেদ আলী তাদের পথের কাটা ছিল। মোরশেদ আলী অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে এলাকায় প্রকৃত অপরাধীদের মুখোশ খুলে যায় এবং নৃশংস ও নির্মম হত্যাকান্ড ঘটায়।

আসামীরা এমন পাষন্ড হয় যে, মোরশেদ আলী বার বার রোজার দোহাই দেয়। ইফতার পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখার আকুতি জানায়।

কোন দোহাই বা অনুরোধ রক্ষা না করেই রোজাদার, অন্যায়ের প্রতিবাদকারী,মোরশেদ আলীকে প্রকশ্যে দিবালোকে নৃশংস, নির্মমভাবে হত্যা করে।

মামলার এজাহারে ২৬ জন সহ অজ্ঞাত নামা ৮/১০ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও স্থানীয় তদন্তে মাহমুদুল হকের পরিবারের সদস্যরাই হত্যাকান্ডের মূল ছিল মর্মে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ইউসুফ।

গত ৭ এপ্রিল ইফতারের আগ মুহূর্তে মোরশেদ আলীকে জনসম্মুখে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ-যুব লীগের ১০ নেতাসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই জাহেদ আলী। যার মামলা নং- ১৭/২২৭। গত ৯ এপ্রিল দায়েরকৃত এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।  নিহত মোরশেদ আলী পিএমখালীর মাইজপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মরহুম ওমর আলীর পুত্র।

ঘটনার প্রতিপৃষ্ঠ তুলে ধরে র‍্যাব জানায়, মোরশেদ আলীর পরিবারের লোকজন পিএমখালী ইউনিয়নের ১০ নং পানি সেচ স্কিম পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু আসামীরা অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক পানি সেচ স্কিম নিজেদের দখলে নিয়ে চাষাদের নিকট হতে অতিরিক্ত টাকা দাবিসহ নানাভাবে অত্যাচার করে। আর্থিকভাবে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। উক্ত স্কিম ফিরে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকলে মাহমুদুল হকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

মোরশেদ আলী অন্যায়ের প্রতিবাদকারী যুবক হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তাকে বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল এলাকার চিহ্নিত দুস্কৃতিকারীরা।

৭ এপ্রিল মোরশেদ বাড়ি হতে বের হয়ে ইফতার সামগ্রী কিনতে চেরাংঘর ষ্টেশনের তরকারীর দোকানের সামনে পোঁছলে দুই দিকের রাস্তা বন্ধ করে হামলা করা হয়। মোরশেদকে মাটিতে ফেলে প্রথমে ধারালো কিরিচ দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় গুরুতর জখম করে। এরপর আবদুল্লাহ (৩০) এবং আব্দুল আজিজ (২৮) লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মোরশেদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করলে মোরশেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে মোহাম্মদুল হক প্রকাশ মাহমুদুল হক ধারলো কিরিচ দিয়ে মোরশেদ আলীর ডান হাতের কব্জি কর্তনের উদ্দেশ্যে কোপ দিয়া কব্জি হাত হতে প্রায় বিছিন্ন করে ফেলে। মোহাম্মদ আলী প্রকাশ মোহাম্মদ (৪৫), মোরশেদ আলীর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য হাতুড়ি দিয়ে মোরশেদ আলীর অন্ডকোষে উপুর্যপুরি আঘাত করে। তাতে মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

পরে স্থানীয় লোকজন মোরশেদকে উদ্ধার করতে চাইলে মোহাম্মদ আলী আগ্নেয়াস্ত্র বের করে ১৫/২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষন করে। উপস্থিত লোকজন ঘটনার ভিডিও করতে থাকলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখায় ঘাতকেরা।

রোজাদার মোরশেদ আলী ইফতার পর্যন্ত বাঁচার আকুতি জানালেও তাকে বাঁচতে দেয়নি নরপশুরা।

মাহমুদুল হক ছিল এই নারকীয় হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী, যা একাধিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদ টাকা পয়সা নিয়ে সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে তাদের যাবতীয় অপরাধ কর্মকান্ড নির্বিগ্নে করতে মোরশেদ আলীকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়।

পূর্ব পরিকল্পনামতে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মম ও নৃশংসভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটায়। এই নারকীয় হত্যাকান্ডের নেপথ্যে মদদদাতা ছিলেন মাহমুদুল হকের ভাই নুরুল হক।