জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ছাত্রদল-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
আজ ২৬ মে বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল সংলগ্ন শিক্ষা চত্বর থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের একটি মিছিল দোয়েল চত্বরের দিকে যাচ্ছিল। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কে সামনে দেখে কার্জন হল সংলগ্ন ভাসমান চারা গাছের নার্সারির দোকান থেকে লাঠিসোটা নিয়ে
দোয়েল চত্বরে অবস্থানরত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে ধাওয়া করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় সংঘবদ্ধভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল এবং ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা ,দা ,স্ট্যাম্প ও হকিস্টিক নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। হাইকোর্ট সংলগ্ন
শিক্ষা চত্বরে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করতে দেখা যায়।প্রায় ২০ মিনিট ধরে ছাত্রলীগের এলোপাতাড়ি হামলা এবং গুলিতে ছাত্রদলের ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ছাত্রদলের কর্মী মনে করে নিজেদের সংগঠনের ৫ জন কর্মীকে পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
আহতদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান,যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম তারিক, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সভাপতি তারেক হাসান মামুন, বিজয় একাত্তর হলের সহ-সভাপতি তানভীর আজাদী, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগ কর্মী আতিক মোরশেদ সহ অনেকেই।
আহত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আক্তার হোসেন জানান, আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের হাতে খাতা এবং কলম তুলে দিয়েছিলেন বলে আমরা শুনেছিলাম। কিন্তু তাদের কে অস্ত্র দিয়েছেন কে? আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে অস্ত্র দিয়ে মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছে ছাত্রলীগ।
ঘটনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। অনলাইনে কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠালে তিনি সিন কোনো জবাব দেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম সাংবাদিকদের জানান, খুনি জিয়াউর রহমানের সন্তান তারেক রহমান ছাত্রদলকে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় লাশ ফেলতে চায়। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা ও সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের কে নিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করবে।
সাংবাদিকের মোবাইল ছিনতাই: ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় ছবি ভিডিও করার সময় ডেইলী ক্যাম্পাসের সাংবাদিক আবির আহমেদ এর মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। কয়েকজন সাংবাদিককে ছবি তোলার সময় বাঁধা দিয়েছেন এবং বাজে মন্তব্য করেছেন।
আইনজীবীদের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ:
সুপ্রিমকোর্ট এলাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ- সভাপতি তিলোত্তমা শিকদারের নেতৃত্বে ছাত্রদলের এক কর্মীকে পিটিয়ে জখম করে। কিন্তু তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী হাইকোর্ট মাজার মসজিদ ঢুকলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে হামলা চালায়। এতে মুসল্লিদের সাথে ছাত্রলীগের কর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়। তারপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একটি বিক্ষুব্ধ অংশ হাইকোর্টে প্রবেশ করে আইনজীবীদের গাড়ি ভাঙচুর করে। ঘটনার ছবি তুলতে গেলে “তারেক” নামে সুপ্রিমকোর্ট বারের এক আইনজীবী কে পিটিয়ে জখম করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হাইকোর্টের আইনজীবী সহকারী এবং বিচারপ্রার্থীদের উপর আক্রমণ করে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
আইনজীবীদের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম: সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় হেলমেট বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তারের জন্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একটি অংশ। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আহমদ বাদল এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহবুব তাৎক্ষণিক এক মানববন্ধনে এ আলটিমেটাম দিয়েছেন। দাবি আদায় না হলে আগামী রোববার কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।