এম.মনছুর আলম, চকরিয়া :
বছর ঘুরে এলো কক্সবাজারের ভয়াল মাতামুহুরী ট্র্যাজেডি’র দিন। ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই চকরিয়া গ্রামার স্কুলের একসঙ্গে পাঁচ শিক্ষার্থী ফুটবল খেলা শেষে মাতামুহুরী নদীতে গোসল করতে নেমে একই সাথে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সন্তান হারানো সেই সব পরিবারে আজো চলছে শোকের মাতম। দিনটি ফিরে আসলে, সন্তান হারানোর কথা মনে পড়লে তাদের শোকে বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনরা নিরবে কেঁদে কেঁদে
চোখের জল ফেলে। অকালে ঝরে যাওয়া পাঁচ শিক্ষার্থীর স্বজনরা শুধু নয়, পুরো চকোরিয়াবাসী নিষ্পাপ শিশু-কিশোরদের মৃত্যুতে আজো শোকে ম্যূহমান। দিনটি ফিরে আসলেই স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। এছাড়া বিদ্যালয়ের সহপাঠী ও অধ্যায়নরত ছাত্ররা সেই পাঁচ বছর আগের কথা স্মরণ হলেই আঁতকে ওঠেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে জেগে ওঠা বালুচরে ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই একই বিদ্যালয়ের অন্তত ২২ বন্ধু ফুটবল খেলা শেষে বিকেলে হৈহুল্লা করে নদীতে গোসল করতে নেমেছিল। অন্যরা গোসল করে উঠে আসতে সক্ষম হলেও ছয় বন্ধু চিরতরে হারিয়ে যায়। এদের মধ্যে একজন হাবুডুবু খাচ্ছে দেখে বন্ধুরা গিয়ে তাকে জীবিত উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তার সহপাঠীরা মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চকরিয়া একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। তবে তাদের অজান্তে আরো ৫ মেধাবী ছাত্রের সলিল সমাধি হয়। তারা সকলে স্থানীয় গ্রামার স্কুলের শিক্ষার্থী। পরে ডুবুরি দল এসে প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় রাত ১২টা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে এক এক করে পাঁচজন শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেন।
মাতামুহুরী নদীতে সলিল সমাধি হওয়া শিক্ষার্থীরা হলো, চকরিয়া গ্রামার স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ও আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আনোয়ার হোছাইনের দু’পুত্র আমিনুল হোছাইন এমশাদ (১৭) ও তার ছোট ভাই একই স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র আফতাব হোছাইন মেহেরাব (১৫), একই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জলি ভট্টাচার্য্যের পুত্র তুর্ণ ভট্টাচার্য্য (১৭), ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের পুত্র ১০ম শ্রেণীর ছাত্র সাঈদ জাওয়াদ আর্ভি (১৭) ও কাকারা ইউনিয়নের মোহাম্মদ শওকতের পুত্র ১০ম শ্রেণীর ছাত্র ফারহান বিন শওকত (১৭)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়ার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আনোয়ার হোসাইনের বাড়িতে দুই পুত্রকে হারিয়ে মা-বাবা, চাচা-চাচিসহ পরিবারের সদস্যরা আজো নির্বাক। দীর্ঘ ৫টি বছর অতিবাহিত হলেও এখনো সন্তান হারানোর শোকে স্তব্ধ পরিবারের সদস্যরা। যেন তাদের নয়নের মণি আমিনুল হোসাইন এমশাদ ও মেহরাব হোসাইনকে হারানোর কান্না ভেসে আসে। ব্যবসায়ী আনোয়ারের সংসার আলোকিত করে রেখেছিল তাঁর দুই পুত্র। পড়ালেখায়ও তারা ছিল বেশ মেধাবী। দুই পুত্রকে ঘিরে বড় স্বপ্ন ছিল আনোয়ার হোসাইনের। কিন্তু মাতামুহুরী নদীতে দুই সন্তানের সলিল সমাধিতে চুরমার হয়ে গেল তার সেই স্বপ্ন। নিভে গেল একটি বাড়ির দুটি প্রদীপ। তার দুই পুত্রের বড় ছেলে এমশাদ হোছাইন ছিল চকরিয়া গ্রামার স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। অপর পুত্র মেহরাব হোছাইনও ছিল একই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।
এদিকে, সন্তান হারানো ওই স্কুলের দুই শিক্ষকও হারিয়েছিল তাদের বুকের ধনকে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম তার বড় পুত্র সাইয়্যিদ জাওয়াদ আর্ভিকে হারিয়ে এখনো সন্তানের শোকে নির্বাক। একই অবস্থা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জলি ভট্টাচার্য একমাত্র পুত্র তূর্য ভট্টাচার্যকে হারিয়ে তাদের পরিবারেও নিরবে নিভৃতে কেঁদে কেঁদে চোখের জল ফেলে তার পরিবার। দিনটি ফিরে আসলেই স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।
ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রবিউল হোছাইন রনি বলেন, ১৪ জুলাই আসলেই এক সাথে দুই ভাই হারানোর দুঃসহ স্মৃতি খুবই কষ্টের। তাঁদের কথা মনে পড়লে চোখে জল আসে। কোনদিনই ভুলতে পারবো না ভাইদের রেখে যাওয়া সেই সব স্মৃতি। আজো চোখের সামনে ভাসে রাক্ষুসে মাতামুহুরীর সেদিনের কালো অধ্যায়ের ঘটনা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।