জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
‘কোন ভাবেই আপনি একা একা গিয়ে কাউকে মারতে পারেন না। আমার নবী এভাবে কাউকে মারেন নাই। আমার নবী যেহেতু কাউকে মারে নাই। আপনি এত বড় কেউ হন নাই যে, আপনি গিয়ে কাউকে মারতে পারবেন। এই বিবেকবোধ যদি আপনার ভেতরে থাকে তাহলে বলব ঠিক আছে। তাহলে বলবো আপনি ধার্মিক। তা না হলে বলব আপনি ধর্মের নামে ভন্ড। আপনি সুবিধাবাদী ভন্ড।’
‘এমন কি আমার নবী যে কাজ করে নাই, যেভাবে ধর্মকে বিশ্লেষণ করে নাই। সমাজকে বিশ্লেষণ করে নাই। কারো গায়ে হাত তুলে নাই। বিধর্মীরা যত কিছু করুক না কেন তবুও নবী সাঃ তাদের আঘাত করে নাই। নবী যেহেতু করে নাই। আমি তার উম্মত। আমি কোন বাহাদুর হয়ে গেলাম। আমি গিয়ে মানুষের বাড়িঘর পুঁড়িয়ে ফেলব।’
২৪ অক্টোবর (রোববার) ৪টায় সৈন্যেরবাড়ি শাহী জামে সংলগ্ন মাঠে উঠোন বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন কর্ণফুলী জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) মোঃ মাসুদ রানা।
তিনি আরো বলেন, ‘বিবেক সবচেয়ে বড় বিচার। আমি আপনাদের সামনে আজ যে কথাগুলো বলছি। আমি আজকে রাতে ঘুমানোর আগে যদি ভাবতে পারি। কথাগুলো মিথ্যা বললাম, না সত্য বললাম? আমার জীবনের সাথে কথাগুলো কতটুকু যায়! এটাই হচ্ছে বড় ব্যাপার। এটাই বিবেক।’
‘মসজিদে আমরা যখন নামাজের জন্য আসি। তখন সব সময় চিন্তা করি সব কিছু ভূলে আল্লাহকে যেন স্মরণ করি। এটাই তো যুদ্ধ; নাকি? আমরা চেষ্টা করি বিবেকের কাছে নিজে ভালো থাকার। তাহলে দেখুন, আজকে পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম বলা হচ্ছে ইসলামকে। আমরা মহানবী সাঃ এর উম্মত। নবীর চেয়ে বড়তো আমরা নই। আমার বিবেক আছে। আমরা নবীর উম্মত। তাঁর দিকনির্দেশনা ও দেখানো পথে আমরা চলি। তাহলে কোন ঘটনা যখন সামনে ঘটে। তাহলে সেটা স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিচার করতে হবে।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে আগুন, হত্যা এবং চলমান সহিংসতার প্রতিবাদে স্থানীয় জনতা ও ৮৮নং বিট পুলিশের উদ্যোগে কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যায় এই উঠোন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সমাজসেবক হাজী মোহাম্মদ ইসমাইলের সভাপতিত্বে সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওয়াজ উদ্দিন আজাদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্ণফুলী থানার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ দুলাল মাহমুদ।
ওসি বলেন, ‘পুলিশ ইচ্ছে করলেই একার পক্ষে মাদকমুক্ত সমাজ গঠন করতে পারবে না। পুলিশ ইচ্ছে করলেই কিশোর গ্যাং অপরাধ দমন করতে পারে না। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মাদক শুধু ছেলেরা সেবন করে না। এখন মেয়েরাও মাদক সেবন করে। তাই প্রত্যেক পিতামাতাকে ছেলেমেয়েদের খোঁজ খবর নিতে হবে। ছেলেমেয়েরা কে কোথায় যায়, কার সাথে মিশে।’
সহকারি পুলিশ কমিশনার তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘শেষ বিচারের দিন কী আমাদের সবার ওছিলাহ্ দিলে হবে। আল্লাহকে কী আমরা বলতে পারব এই লোক গুলোর জন্য আমি এই কাজ করেছি। আল্লাহ কী সেটা মানবে? আমার বিচার কী আমার কাজ দ্বারা হবে না? হুজুর আমাকে ডাক দিয়েছে তাই গিয়েছিলাম এটা কী সেদিন বলতে পারব? তার কোন সুযোগ আছে বলে আমার জানা নেই।’
‘আমি ধর্মকে এত বিশদভাবে বুঝি না। হুজুরেরা ভালো ভাবে তা ব্যাখা দিতে পারবেন। আমি শুধু বুঝি আমার বিবেক আমার কাছে বড়। একটা লোক কথা বলতে পারে কিন্তু আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তার বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে। আমার নবী, আমার ধর্ম, সর্বোপরি আমার দেশ কিভাবে সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। এটা বুঝেই সামনে চলতে হবে।’
‘আপনারাই বলেছেন মন্দিরে হামলাকারীকে পুলিশ প্রশাসন ধরেছে। অন্য কেউতো, ধরেনি। পুলিশ তো ধরেছে। কারণ এটাই পুলিশের কাজ। একটা দেশ মানে দেশের আইন কানুন আছে। যেমন এই কাজটা পুলিশের ছিল। তাই পুলিশ তাকে ধরেছে। হতে পারে এ রকম ঘটনা আপনাদের সামনে আরো আসবে। তখন আপনাদের কাজটা হবে কী? আপনার ধর্মীয় চিন্তা ভাবনা, ব্যক্তিগত বিবেকবোধ এবং রাষ্ট্রের যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আছে এই তিনটাকে মিলিয়েই হবে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
‘একজন ডাক দিলেই আপনি চলে যাবেন। আপনার বিবেক ও বিশ্বাস কী এতই ঠুনকো। যে একজন খুব সহজেই আপনাকে কলুষিত করে দিলো। এটা কিভাবে পারলেন আপনি। অনাকাঙ্খিত ভাবে হোক একটা ঘটনা দেশে ঘটল। সেটার জন্য যে আজ এত লোক মারা গেল। আমরা এটার জবাব কি দেবো আল্লাহর কাছে? একটা ঘটনায় এত লোকের মৃত্যু ঘটালাম। বাড়িঘর পুঁড়াইয়া দিলাম। এর জবাব কী আল্লাহকে দিতে পারব? এই স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এ রকম ঘটনা সামনে আসলে, মাথা ঠান্ডা রেখে সমাজের লোকজন সবাইকে নিয়ে বসে সমাধান করতে হবে। আইনের আশ্রয় নিতে হবে।’
‘এসব স্বাভাবিক জ্ঞান বুদ্ধির বিষয়। এসব ঘটনা শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট করে দেয়। শ্রদ্ধাবোধ গড়তে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু দুষ্কৃতিকারীরা তা সহজেই নষ্ট করে দেয়। আপনাকে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন কথা বলে সহজেই কলুষিত করে দিতে পারে তারা। এসব বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের আলেম সমাজ যেন কোরআন হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। কারণ তাদের কথা সমাজের লোকজন যেভাবে শুনবে, আপনার আমার কথা সে ভাবে শুনবে না।’
বৈঠক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিট পুলিশের সহ-সভাপতি ডাঃ ইকবাল খোরশেদ, মাওলানা এনামুল হক এনাম, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন (নবী), ইউপি সদস্য মোঃ ফোরকান, মোহাম্মদ আনসার হোসাইন, জানে আলম দোভাষ, মোঃ সেকান্দর ও প্রমুখ।
এছাড়া থানা পুলিশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন উত্তর চরলক্ষ্যা বিট পুলিশের ইনচার্জ এসআই আমির আহমেদ, পুলিশ সদস্য বিকাশ ও মোঃ ইব্রাহিম।