মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
উপনিবেশিক শাসনামলে এদেশে ন্যায় বিচার ও সবার জন্য, সবক্ষেত্রে সমতা উপেক্ষিত ছিলো, তাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আকুল আবেদন ছিলো এদেশকে স্বাধীন করে সবার জন্য সমতা ও সর্বক্ষেত্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। এ সদিচ্ছার কথা বঙ্গবন্ধু সবসমই বলতেন। আর বর্তমানে বিচারক এবং আইনজীবীরা বঙ্গবন্ধুর এ সদিচ্ছা বাস্তবায়নে সমন্বিতভাবে একযোগে কাজ করছে।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির দেওয়া এক সমবর্ধনা সভায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণি এ কথা বলেন।
সমবর্ধনার জবাবে বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণি আরো বলেন, বিচারক এবং জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মেধাবী আইনজীবীরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ দেশের সার্বিক বিচার ব্যবস্থাকে কে সমৃদ্ধ করেছেন। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা তাদের জ্ঞান, মেধা দিয়ে দেশ-বিদেশের উচ্চ আদালতের নজীর সহ বিভিন্ন আইনী ব্যাখ্যা বিচারকদের সামনে আদালতে উপস্থাপন করেন। আইনজীবীদের উপস্থাপিত আইনানুগ ও যৌক্তিক বক্তব্য বিচারকদের সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে মামলা নিষ্পত্তিতে সহায়ক হয়। এতে বিচারপ্রার্থীরা যথাযথ সেবা পান এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়। এ প্রসংগে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রতিজযষা জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের বিভিন্ন সময়ে আদালতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার কথা শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখ করেন।
বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণি বলেন, আইনজীবীদের সহায়তা ছাড়া মামলার জট কমানো সম্ভব নয়। এজন্য আদালতে মামলার চাপ কমাতে এবং নূন্যতম সময়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে আইনজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে।
২৬ বছরের আইন পেশা এবং ১৩ বছরের বিচারিক জীবন-দুটোর মধ্যে আইন পেশাতে থাকাবস্থাতেই তিনি নিজেকে বেশি উপলব্ধি ও এনজয় করেছেন বলে জানান-বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণি।
তিনি নবীন আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মামলার প্রতি মনযোগ, সময় দিয়ে, প্রয়োজনীয় পড়াশোনা করে আদালতে শুনানি করতে হবে। তাহলে বিজ্ঞ বিচরকেরা মামলা নিষ্পত্তিতে স্বল্প সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবেন এবং সংশ্লিষ্ট আইনজীবী কাংখিত ফলাফল ও বিচারপ্রার্থীরা যথাযথ সেবা পাবেন। আদালতে দুর্বল ও মনগড়া শুনানি করলে বিচারপার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিচার বিভাগ সম্পর্কে সমাজে নেতিবাচক বার্তা যাবে।
বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণি কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল আদালত ভবন এবং জেলার চৌকি আদালত গুলোর দৈন্যদশা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
কক্সবাজার বিচার বিভাগের বিভিন্ন সমস্যা, সংকট ও সমাধানের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী ও আইন বিভাগের সচিবকে তিনি অবহিত করবেন এবং এসব বিষয়ে তাঁর পরিদর্শনে জোর সুপারিশ থাকবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল এর সভাপতিত্বে, সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার এর সঞ্চালনায় উক্ত সংবর্ধনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন-কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা নুরুল হকের কোরআন তেলাওয়াত এর মাধ্যমে শুরু হওয়া সমবর্ধনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজারের জিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ অতিথি'র বক্তব্যে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ভৌগোলিক কারণে কক্সবাজারে মামলার আধিক্য রয়েছে, মামলার জট দিন দিন বাড়ছে। জামিনের আবেদন শুনানি করতে গিয়ে ট্রায়াল মামলার নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। আবার বিচারক স্বল্পতা সহ পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট ও জনবলের অভাবে আদালতে বেশি সময় দিয়েও আশানুরূপ মামলা নিষ্পত্তি করা যাচ্ছেনা। সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বলেন, মামলার আধিক্য ও মামলা জটের কথা বিবেচনা করে কক্সবাজার বিচার বিভাগের জন্য আরো ৪ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এর পদ সৃষ্টির আবেদন করেছিলাম। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তাঁর আবেদন সুবিবেচনা করে কক্সবাজার বিচার বিভাগের জন্য আরো ৪ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এর পদ সৃষ্টি করেছেন। এজন্য সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী, আইন বিভাগের সচিব সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি কক্সবাজার জেলা সদরের জন্য আরো ৩ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং একই সাথে চকরিয়া চৌকি আদালতের জন্যও একজন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজের পদ সৃষ্টি করতে সুপারিশ করার জন্য সমবর্ধিত অতিথির প্রতি অনুরোধ জানান।
স্বাগত বক্তব্যে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল কক্সবাজার বিচার বিভাগ বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের কথা জোরালোভাবে তুলে ধরেন। সে সব সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ করতে সমবর্ধিত অতিথি বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণি'র প্রতি অনুরোধ জানান। কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি নেতৃবৃন্দের অনুরোধে আইনজীবী সমিতির সমবর্ধনা গ্রহন করায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল।
সমবর্ধনা সভার শুরুতে সমবর্ধিত অতিথি বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণি-কে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল। এছাড়া সমিতির কার্যকরী কমিটির পক্ষ থেকে সমবর্ধিত অতিথিকে প্রবাল উপহার দেওয়া হয়।
সমবর্ধনা সভায় অন্যান্য বিচারকদের মধ্যে, কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন, ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোঃ মশিউর রহমান খান, কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণি গত ৩ সেপ্টেম্বর ৫ দিনের সফরে কক্সবাজার আসেন। সফরকালে তিনি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং এ আদালতের অধীনস্থ আদালত সমুহ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সমুহ, কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও উক্ত আদালতের অধীনস্থ আদালত সমুহ পরিদর্শন করেন। বুধবার ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩ টায় বিমানযোগে বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণি ৫ দিনের সফর শেষে কক্সবাজার ত্যাগ করবেন বলে হাইকোর্ট বিভাগের প্রটোকল শাখা সুত্রে জানা গেছে।