# বিদেশী ৩২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ১০০ একর জমিতে নির্মাণ চলছে সাদ মুসা শিল্প পার্ক। এর মধ্যে সব ধরনের শিক্ষার সুবিধাসহ ১০০ বিঘা প্লটে একটি শিক্ষা পার্ক, ৪০ বিঘা জমিতে একটি হাসপাতাল, বসবাসের জন্য পরিকল্পিত গ্রাম, টেক্সটাইল চাহিদা পূরণে মিল এবং খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের ২৪টি কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি।

দেশের ব্যাংকগুলো হতে বিমুখ হলেও সাড়া দিয়েছে চীন, বেলজিয়াম ও জার্মানি ভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংক। যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৩২৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। বিদেশি ঋণদাতাদের মধ্যে– চীনের এগ্রিকালচারাল ব্যাংক দিবে ৭৮.৩৩ মিলিয়ন বা প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। জার্মানির ল্যান্ডসব্যাংক বাডেন-উর্টেমবার্গ ২৫ মিলিয়ন ডলার ও অল্ডেনবুর্গিশে ল্যান্ডসব্যাংক এজি আরও ২৫ মিলিয়ন এবং ব্যাংক অব বেলজিয়াম দেবে ১৫ মিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের ৪ আগস্ট বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) দেওয়া চিঠিতে, সুলতানা হাবিবা ফ্যাব্রিক্স মিলের যন্ত্রপাতি কিনতে এগ্রিকালচারাল ব্যাংক অব চায়নার ৭৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার অনুমোদন চেয়েছে সাদ মুসা গ্রুপ।

যদিও এর পুর্বে রাষ্ট্রায়ত্তসহ প্রায় এক ডজন ব্যাংকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে সাদ-মুসা গ্রুপের। ২০০৫ সালে তাদের একটি ফ্যাক্টরি পুড়ে যাওয়া, আইসিবির ঋণ না পাওয়া এবং করোনায় ব্যবসায় মন্দার কারণে ঋণের একটি অংশ খেলাপি হয়েছে। কিছু ঋণ কিস্তি দিয়ে পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করা হয়েছে। পরিচালক মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছেন, ১৯৮২ সাল থেকে ব্যবসা করছি। এই সময়ে ঋণ পরিশোধে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে কিছু ঘটনার কারণে সমস্যা হয়েছে। সমাধানে আমরা চেষ্টা করছি।

চট্টগ্রাম ভিত্তিকি এই সাদ মুসা গ্রুপ খারাপ সময় পাড়ি দিয়ে ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনয়নের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে বিপুল বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। চলমান টেক্সটাইল ব্যবসার পাশাপাশি ইস্পাত, সিমেন্ট, কৃষি, অবকাশ কেন্দ্র ও আবাসনের মতো খাতেও নতুন করে বিনিয়োগের কথা ভাবছে। গ্রুপটি প্রায় ৩৩৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়েছে, যার সিংহভাগ অর্থায়ন আসবে বিদেশি ঋণের মাধ্যমে।

স্থাপন করছে সুলতানা হাবিবা ফ্যাব্রিক্স মিল, যাতে থাকবে আটটি ইউনিট। এ কারখানায় কটন ইয়ার্ন স্পিনিং, ব্লেন্ডেড ইয়ার্ন স্পিনিং, ওয়েভিং, সার্কুলার নিটিং, আরএমজি ডাইং, প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং, হোম টেক্সটাইল ডাইং এবং ইয়ার্ন ডাইং- এর কার্যক্রম চলবে বলে জানান কোম্পানিটির কর্মকর্তারা। এই মিলটি সম্প্রসারণ ছাড়াও সাদ মুসা ডেনিম এবং সাদ মুসা টেরি টাওয়েলস মিলে আরও ৯০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে গ্রুপটি।

অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে এরমধ্যেই ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে মিলটির আংশিক নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে গ্রুপটি। এখন বিদেশি ঋণে দরকারি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। গ্রুপের মূল ব্যবসা টেক্সটাইল খাত- বিশেষত হোম টেক্সটাইল কেন্দ্রিক হলেও, ভবিষ্যতের বাজার ও ব্যবসা সম্ভাবনা মাথায় রেখে ইতোমধ্যেই অন্যান্য খাতেও ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে এবং আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও নিয়েছে।

২০২৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র, অটো ব্রিকস, কৃষি-ভিত্তিক প্রকল্প, সিমেন্ট ও ইস্পাত শিল্প এবং ২০৩০ সালের মধ্যে আবাসন খাতে ব্যবসা বৈচিত্র্যকরণের পরিকল্পনা করছে সাদ-মুসা। মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে নতুন কয়েকটি খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ হলে গ্রুপটিতে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে আমাদের ২৭টি শিল্প ইউনিটে কর্মসংস্থান প্রায় ১২ হাজার। তিনি বলেন, সিমেন্ট শিল্পেও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাদ মুসা গ্রুপ, যার জন্য চট্টগ্রামের শিকলবাহায় ২০ একর জমিও কিনেছে।

২০২৫ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে, এজন্য আরও ২০ একর জমি কিনেছে। এই কারখানায় দৈনিক ১,০০০ টন ইস্পাত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কক্সবাজারে সাত তারকা মানের অবকাশকেন্দ্র এবং আবাসন খাতেও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে গ্রুপটি।

সাদ মুসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহসিন জানান, ‘ইতোমধ্যে চীন, বেলজিয়াম ও জার্মানির কয়েকটি ব্যাংক ৩ শতাংশ সুদে প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি।’

যেভাবে গড়ে উঠে সাদ মুসা গ্রুপ:

মোহাম্মদ মহসিন তরুণ বয়সে ১৯৮২ সালে এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে ব্যবসা শুরু করেন। শুরুতে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। প্রথমে ব্যবসায় লোকসান হলেও দমে যাননি উদ্যমী তরুণ। এরপর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মাধ্যমে আবারও ব্যবসা শুরু করেন। কয়েক বছর পর জাহাজ নির্মাণ খাতে ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে এ ব্যবসায় সাফল্য পেতে থাকলে, টেক্সটাইল খাতে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম শিল্পোদ্যোগ ছিল- চিটাগং ফাইবার বোর্ডস, যা লেদার ফাইবার শিট এবং সিলভার ক্যান উৎপাদন ও সরবরাহ করতো। ১৯৯৪ সালে তিনি তার বাবা ও চাচার নামে সাদ মুসা গ্রুপ গঠন করে বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ শুরু করেন। এরপর থেকে মহসিনকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।