চট্টগ্রাম প্রতিদিন:

চট্টগ্রামের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সরকারি কলেজসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের চার সরকারি কলেজে বিপুল অংকের টাকা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে সরকারের শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রামের বাকি তিন সরকারি কলেজ হচ্ছে সন্দ্বীপের সরকারি হাজী এ বি কলেজ, বান্দরবান সরকারি কলেজ ও কক্সবাজার সরকারি কলেজ। এই চার কলেজসহ সারা দেশে ৪৩টি সরকারি কলেজ ও ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গুরুতর অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে শিক্ষা অডিট নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনে।

এসব অনিয়ম হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরে। অডিটে ৫৪টি খাত চিহ্নিত করে মোট ৩১ কোটি ৯১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫৪ টাকার অনিয়ম খুঁজে পাওয়া গেছে। অডিট আপত্তি ওঠার পর ইতিমধ্যে এসব অনিয়মের ব্যাখ্যা চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সরকারের শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পরীক্ষায় শিক্ষকরা সম্মানী তুলেছেন প্রাপ্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি। অডিটে দেখা গেছে, শিক্ষক ও কর্মচারীদের দেওয়া সম্মানী ও বিভিন্ন বিল থেকে আয়কর কেটে না রাখায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৮ লাখ টাকা। আবার বিল থেকে মূল্য সংযোজন কর কেটে না রাখায় অনিয়ম হয়েছে ৩৭ লাখ টাকারও বেশি। অন্যদিকে বিভিন্ন কাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের অগ্রিম বাবদ টাকা দেওয়া হলেও তা সমন্বয় না করে প্রায় ৬৯ লাখ টাকা অনিয়ম করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে সংযুক্ত শিক্ষকদের অনেকে বিধিবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত হারে বাড়িভাড়া নিয়েছেন। এ বাবদেই সরকারের ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৯২ লাখ টাকা।

শিক্ষা অডিটে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেমিনার ফির নাম করে টাকা নেওয়া হলেও নিয়ম অনুযায়ী সেই টাকার ন্যূনতম ২০ শতাংশ দিয়ে কেনা হয়নি বই, জার্নাল কিংবা পত্রিকা। অন্যদিকে ম্যাগাজিন প্রকাশের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হলেও প্রকাশ করা হয়নি ম্যাগাজিনই। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি ও ভর্তি ফিসহ কয়েক ধরনের ফি আদায় করা হলেও সরকারি কোষাগারে ৩৮ লাখ টাকা জমাই করা হয়নি।

নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা প্রায় ৯১ লাখ টাকা এক খাত থেকে আরেক খাতে স্থানান্তর করা হয়েছে বিধিবহির্ভূতভাবে। ছাত্রীদের উপবৃত্তির অবিলিকৃত প্রায় পৌনে ৪৭ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারেও জমা না করা হয়নি।

অডিটে দেখা গেছে, টেন্ডার রেসপনসিভ না হওয়ার পরও অভিযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ‘কোটেশনের’ মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় করেছে।