মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
হত্যা মামলার রায়ে স্বামীকে মৃত্যুদন্ড এবং স্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। একইসাথে স্বামীকে ১০ লক্ষ ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৪ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং স্ত্রী-কে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন বৃহস্পতিবার ১৫ সেপ্টেম্বর এ রায় ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি এবং রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটি পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী বিষয়টি জানিয়েছেন।
মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামী হচ্ছে-কক্সবাজরের পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়নের আবদুল হামিদ সিকদার পাড়ার মৃত মৌ: নুর আহমদ এর পুত্র ছালেহ জঙ্গি প্রকাশ ছোটন (২৬) এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ড হওয়া আসামী হচ্ছে ছালেহ জঙ্গি প্রকাশ ছোটনের স্ত্রী আসমাউল হোসনা লিপি (২২)। দন্ডিত আসামীদ্বয় পলাতক রয়েছে। রায়ে মামলার অপর ৪ জন আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।
অর্থদন্ডের ১০ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করার পর বাকী অর্থ মামলার বাদীকে প্রাদান করতে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
২০১৫ সালের ৬ মে রাত ৯ টার দিকে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়নের আবদুল হামিদ সিকদার পাড়ার মাস্টার মোহাম্মদ ইউনুসের বাড়ির টিনের চালের উপর দিয়ে ছালেহ জঙ্গি প্রকাশ ছোটনের বাড়িতে বিদ্যুৎ কানেকশনের তার নিয়ে যাওয়ায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের আশংকা পোষন করতে থাকেন মোহাম্মদ ইউনুস ও তার স্বজনেরা। এ বিষয়ে ২০১৫ সালের ৬ মে রাত ৯ টার দিকে মাস্টার মোহাম্মদ ইউনুসের পুত্র এস.এম ফরহাদ উদ্দিন (২৭) ও তার চাচাতো ভাই ছরওয়ার উদ্দিন কথা বলার এক পর্যায়ে ছালেহ জঙ্গি প্রকাশ ছোটন প্রথমে ধারালো কিরিচ নিয়ে হামলা করলে এস.এম ফরহাদ উদ্দিন এর বোন নাফিজা নুর গুরতর আহত হয়। পরে ছালেহ জঙ্গি প্রকাশ ছোটন কাটা বন্ধুক দিয়ে গুলি করলে এস.এম ফরহাদ উদ্দিন ঘটনাস্থলে নিহত হয়।
এ ঘটনায় নিহত এস.এম ফরহাদ উদ্দিন এর পিতা মাস্টার মোহাম্মদ ইউনুস বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামী করে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩২৪/৩৪ ধারায় পেকুয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার পেকুয়া থানা মামলা নম্বর : ৮/২০১৫ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৮৭/২০১৫ ইংরেজি (পেকুয়া) এবং এসটি মামলা নম্বর : ২৮৬/২০১৯ ইংরেজি।
বিচার ও রায় :
মামলাটি বিচারের জন্য ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, সুরতহাল প্রতিবেদন, মায়না তদন্ত প্রতিবেদন, ফরেনসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
বৃহস্পতিবার মামলাটির রায় ঘোষণার দিনে আসামী ছালেহ জঙ্গি প্রকাশ ছোটনকে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন দোষী সাব্যস্থ করে মৃত্যুদন্ড, ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং একই আসামীকে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩২৪ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন। এছাড়া, আসামী আছমাউল হোসনাকে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একইসাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।