মিয়ানমার সীমান্তে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘর্ষে পর্যটকদের নিরাপত্তাজনিত কারণে এবার কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৭টায় কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিউ ঘাট থেকে ছেড়ে গেছে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামে একটি জাহাজ।
কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের কক্সবাজারস্থ ব্যবস্থাপক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজ ৭৫০ জন যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন যাতায়াত শুরু হয়েছে। জাহাজ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেয়া হয়েছে।

সি ক্রুজ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (স্কোয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তবে বিকল্প উপায় হিসেবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এদিকে বছরের প্রথম পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিনে গমন করায় খুশি হয়েছেন দ্বীপের মানুষ। হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীসহ যারা পর্যটন সংশ্লিষ্ট আছেন তারা পর্যটকদের স্বাগত জানাতেও প্রস্তুত রয়েছেন। তবে দ্বীপবাসী ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল না করায় হতাশ হয়ে উঠেছে।

সেন্টমার্টিন হোটেল সি-প্রবালের পরিচালক আবদুল মালেক জানান, এবছর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল না করলে হোটেল ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কারণ মৌসুম সামনে রেখে অনেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে হোটেল রেস্তোরাঁ করেছে। সেখানে একটি জাহাজে ৬০০-৭০০ পর্যটক গেলে কিভাবে ব্যবসা করবে।

দ্বীপের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, সেন্টমার্টিনের লোকজন অপেক্ষা করে কখন পর্যটন মৌসুম শুরু হবে তখনই হাসি ফোটে মানুষের। কিন্তু এ বছর হতাশ দ্বীপবাসী। তিনি আশানূরূপ জাহাজ চলাচলে অনুমতি প্রদানের সংশ্লিষ্টদের অনুরোধের কথা জানান।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন (টুয়াক) এর সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সেন্টমার্টিন ভ্রমণ। কিন্তু হঠাৎ করে চলতি মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হলেও পর্যটকদের টিকিটের চাহিদা ছিল অতিরিক্ত। তাই প্রথমদিনে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণ বাধাগ্রস্ত হলে দেশের পর্যটন শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এতে পর্যটকরা কক্সবাজার বিমুখ হবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান বলেন, সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বিক ব্যবস্থা নিয়েছে। জাহাজে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি দলও পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, নাব্যতা সঙ্কটের কারণে আপাতত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেস পরীক্ষামূলক চলাচল করছে। অবস্থা বুঝে পর্যাক্রমে আবেদন করা জাহাজগুলোকে অনুমতি দেয়া হবে। তবে জাহাজ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সরকারের দেয়া নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।