প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
শিক্ষকেরা এটম বোমার চাইতেও অনেক শক্তিশালী। শিক্ষকেরা চাইলে যুদ্ধও থামিয়ে দিতে পারেন। তাই শিক্ষকদের সম্মান জানানো উচিত। শিক্ষকেরা সম্মানিত হলে পুরো জাতি সম্মানিত হয়।
শনিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত ‘আইপিডিসি- প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা তুলে ধরেন।
কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদা মোর্শেদা আইভির সভাপতিত্বে এবং বন্ধুসভার দপ্তর সম্পাদক সাজিয়া আফরিন সাইমার সঞ্চালনায় অনুষ্টিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ। তিনি বলেন, শিক্ষকতা চাকরি না, পেশাও না। এটি একটি ব্রত। মানুষ গড়ার একটি পন্থা। মানব সন্তান জন্ম হলেই মানুষ হয়না। জন্মের পর ৫ বছর বাবা, মা ও আত্মীয় স্বজন ভরন পোষন করেন। এরপর শিক্ষকেরা আদর, যত্ন, শাসন ও ভালবাসায় মানব সন্তানকে ধীরে ধীরে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। শণের ঘরে টিন লেগেছে, বস্তুগত উন্নয়ন হয়ছে। কিন্তু আত্মিক উন্নয়ন হয়নি। সমাজের সংকীর্ণতায় অসুস্থ প্রতিযোগিতায় কোন শিক্ষক যদি প্রভাবিত হয় তবেই তিনি এই শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেন, ব্যবসা হিসেবে দেখেন। নিজেকে পোশাকি আয়োজনের সাথে মিলিয়ে ফেলেন। যা ২০ বছর আগে দেখা যায়নি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবীন শিক্ষক ও কক্সবাজার উত্তরণ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, অতীতে যারা শিক্ষকতা করেছেন তারা একটি ভীষন নিয়ে কাজ করেছেন। তাদের একমাত্র ভীষন ছিল মানুষ গড়ার। কোয়ালিটি সমাজ বিনির্মানে কোয়ালিটি শিক্ষক দরকার। পত্রিকার কাজ সংবাদ পরিবেশন করা । কিন্তু প্রথম আলো শুধু সংবাদ পরিবেশন করেই থেমে থাকে না তারা বাল্য বিবাহ রোধ, দূর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। নতুন শিক্ষকদের অনেকেই অসম ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা করছেন। এই প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসলে মানুষ সম্মান করবে।
বিশেষ অতিথি ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম বলেন, শিক্ষকেরা এটম বোমার চাইতেও অনেক শক্তিশালী। ফিলিস্তান-ইসরাইল যুদ্ধ যখন থামাতে পারছিলেন না বিশ্বনেতারা, তখন ইসরাইলের এক শিক্ষক ও তাঁর বন্ধু মিলে সেই যুদ্ধ থামিয়েছেন। আমাদের ৫২, ৬২, ৬৯ ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষকেরা সবচেয়ে বেশী ভুমিকা রেখেছেন। কিন্তু আজকে বিশ্বায়নের কারনে অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ঠিক রাখতে গিয়ে শিক্ষকদের সম্মান, শ্রদ্ধা উঠে যাচ্ছে। সমাজের অবক্ষয় রোধে শিক্ষকেরা কাজ না করলে আগামীর বাংলাদেশ থেকে ভালো কিছু আশা করা যাবে না।
স্বাগত বক্তব্যে প্রথম আলো কক্সবাজার আঞ্চলিক অফিস প্রধান আব্দুল কুদ্দুস রানা বলেন, পজিটিভ বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চায় প্রথম আলো। প্রথম আলো সবসময় ভালোর সাথে থাকে, আলোর পথে চলে। প্রথম আলো দেশের গুনীজন, কৃষক, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মীদের সম্মাননা প্রদান করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই প্রিয় শিক্ষকদের সম্মাননা দিচ্ছে।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইপিডিসির ঢাকাস্থ মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা কাজী মাহির। তিনি বলেন, গত ৩ বছরে কক্সবাজার থেকে মাত্র ২ জন শিক্ষক প্রিয়শিক্ষক হিসাবে সম্মাননা পেয়েছেন। আশা করছি কক্সবাজার থেকে আরও বেশি শিক্ষক সম্মাননা পাবেন।
অনুষ্টানে বড় পর্দায় “জার্নি ভিডিও, আখতার স্যার এবং মজুমদার স্যার শিরোনামে পৃথক তিনটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। ভিডিও দেখে অনেকে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
আখতার স্যারের ভিডিও দেখে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, আখতার স্যারের ভিডিও দেখে আমার স্যারদের কথা মনে পড়ে গেল। চোখ ভিজে গেল। শিক্ষক এমনই হওয়া দরকার। তিনি বলেন, এই মহাবিশ্ব থেকে যদি সূর্য নিভে যায় তবে পৃথিবী অন্ধকারচ্ছন্ন হবে না। কিন্তু শিক্ষকরা যদি চোখ বন্ধ করে তবে লাখো সূর্য পৃথিবীকে আলোকিত করতে পারবেনা। কেননা শিক্ষকরা অন্তরে আলো জ্বালায়।
কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন, ২৪ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। কিন্তু প্রথম আলোর মত করে কেউ কখনও শিক্ষকদের বড় পরিসরে সম্মাননা দেয়নি। আমরা শিক্ষকেরা রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে পারিনি, বন্যার্তদের ত্রাণ দিতে পারিনি, শীতার্তদের শীতবস্ত্র দিতে পারিনি। কিন্তু আমরা ক্লাস রুমের কালো বোর্ডে সাদা চকে যা দিই তা অন্য কেউ দিতে পারে না। আমরা শিক্ষকেরা টাকা-পয়সা কিংবা অন্য কিছু চাইনা, শুধু একটু সম্মান চাই।
বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. ছৈয়দ করিম বলেন, শিক্ষকতা পেশায় একবার ডুকলে আর বের হতে পারেন না। রোহিঙ্গা ও ইয়াবায় ধ্বংস হচ্ছে কক্সবাজার। এথেকে পরিত্রানের জন্য শিক্ষক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রবীনদের দেখানো পথে চললেই আমরা সফলতা পাবো।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আবীর আহসান সাগর বলেন, প্রথম আলো একটি সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান। পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি জাতি গঠনে ভুমিকা রাখছে প্রথম আলো। শিক্ষকেরা হচ্ছেন জাতি গড়ার কারিগর। তাঁদের সম্মান দেওয়া দরকার। শিক্ষকদের মূল্যায়ন না করলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
জেলা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন বলেন, আমরা অনেক সুধী সমাবেশ দেখেছি কিন্তু আজ সত্যিকারের সুধী সমাবেশে এসেছি। শিক্ষকদের সম্মান জানিয়ে আজ প্রথম আলো সম্মানিত হল।
পরিবেশকর্মী ও শিশু সংগঠক দীপক শর্মা দীপু বলেন, শিক্ষকদের সম্মান জানিয়ে আমাদের দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছে প্রথম আলো।
কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদা মোর্শেদা আইভি বলেন, যে সমাজে শিক্ষকদের কান ধরে উঠবস করানো হচ্ছে, অপমান করা হচ্ছে, লাঞ্চিত করা হচ্ছে। সে সমাজে প্রথম আলো শিক্ষকদের সম্মাননা জানাতে এগিয়ে এসেছে- এটা শিক্ষকদের সাহস বাড়িয়েছে, আশার আলো জ্বালিয়েছে।
বক্তব্য দেন, চিকিৎসক ও শিশু সংগঠক চন্দন কান্তি দাশ, শ্রেষ্টশিক্ষক ও শহরের উত্তর নুনিয়াছটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফোরকানা বেগম জোৎস্না, ২০২১ সালে প্রিয় শিক্ষক সম্মাননায় সংবর্ধিত শিক্ষক মহেশখালী গোরকঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিতালী প্রভা দে, প্রথম আলো কক্সবাজার বন্ধুসভার সভাপতি রুহুল আমিন প্রমুখ।