মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
দশ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট পাচারের দায়ে একজন আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ২ বছর এক মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন বৃহস্পতিবার ৩ নভেম্বর এ রায় ঘোষণা করেন।
কক্সবাজারের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত আসামী টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং এর পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়ার আবদুল গফুর ও আনোয়ারা বেগমের পুত্র মামুন রশিদ প্রকাশ মামুনুর রশিদ (২২)। রায় ঘোষণার সময় আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন একই আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী এবং আসামী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ফয়সাল।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
২০২১ সালের ৩ মে সকাল ১১ টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের রামু'র মরিচ্যা যৌথ চেকপোস্টে রামুস্থ বিজিবি ৩০ ব্যাটালিয়নের একটি টিম এক অভিযান চালিয়ে টমটম (ইজিবাইক) চালক মামুন রশিদ প্রকাশ মামুনুর রশিদ-কে আটক করে। পরে তার চালিত টমটম গাড়ি তল্লাশি করে টমটমের ছাদের নীচে রক্ষিত থাকা ১০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করে ইয়াবা টেবলেট ও টমটম গাড়িটি জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় বিজিবি ৩০ ব্যাটালিয়নের নায়েব সুবেদার মোঃ মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণীর ১০(গ)/৩৮ ধারায় রামু থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার রামু থানা মামলা নম্বর : ৬/২০২১ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ১৯৪/২০২১ ইংরেজি (রামু) এবং এসটি মামলা নম্বর : ১২৬৬/২০২১ ইংরেজি।
বিচার ও রায় :
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা, (আইও), রামু থানার এসআই মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ২০২১ সালের ২৮ জুন আদালতে চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী বিচারের জন্য মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলাটির ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন ও রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের জন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। বৃহস্পতিবার মামলাটির রায়ের দিনে বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন আসামী মামুন রশিদ প্রকাশ মামুনুর রশিদ-কে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণীর ১০(গ) ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ২ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। মাদক পরিবহনে নিজ টমটম গাড়ি ব্যবহার করায় আসামীকে একই আইনের ৩৮ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে আরো ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও একইসাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদয়ে আরো ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। উভয় ধারায় প্রদত্ত সাজা একত্রে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার মাত্র দেড় বছর সময়ের মধ্যে এই মাদক মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
মামলার রায়ের পর্যবেক্ষনে বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিচার প্রক্রিয়ায় আসামী মামুন রশিদ প্রকাশ মামুনুর রশিদ-কে মৃত্যুদন্ডের রায় দেওয়ার মতো আদালতে ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আসামীর বয়স কম বিবেচনায় আসামীর সাজা শিথিল করে মৃত্যুদন্ডের স্থলে অপেক্ষাকৃত লঘু শাস্তি হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।