রামু প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের আমতলিয়াপাড়া গ্রামে চিহ্নিত ভ‚মিগ্রাসী, চাঁদাবাজ ও প্রতারক চক্রের কবলে পড়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন এলাকার নিরীহ লোকজন। ওই চক্রের কবল থেকে রেহায় পাচ্ছে না ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও। সম্প্রতি ওই এলাকার নূর মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসা ও মসজিদ ওয়াকফ এস্টেট এর পুকুরের বিপুল জমি ওয়াকফ প্রদানকারির ওয়ারিশদের মাধ্যমে বিক্রি করে জবর-দখলের চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লী।
নূর মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসা ও মসজিদ ওয়াকফ এস্টেট এর মোতওয়াল্লী মাওলানা হাফেজ গোফরান জানিয়েছেন- ১৯৪৭ সালে মৃত হাফেজ রমজান আলীর ছেলে মৌলভী নূর মোহাম্মদ এ মসজিদ ও মাদ্রাসার জন্য ১ একর ১ শতক জমি দান করেন। পরবর্তীতে তাঁর নামেই মসজিদ ও মাদ্রাসার নামকরণ করা হয়। ওয়াকফ করা হলেও পূর্ববর্তী ওয়ারিশদের নামে খতিয়ান সৃজিত হওয়ার সুযোগে এলাকায় ভ‚মিদস্যু ও চাঁদাবাজ হিসেবে চিহ্নিত আবুল কাশেম মিজ্জির নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ওয়াকফকৃত পুকুরের জমি সম্প্রতি ওয়ারিশদের মাধ্যমে বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে ক্রেতা এবং ওই সংঘবদ্ধ চক্র একত্রিত হয়ে মসজিদ-মাদ্রাসার ভোগদখলীয় পুকুর জবর-দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
মোতওয়াল্লী মাওলানা হাফেজ গোফরান আরো জানান- বিক্রি হলেও তা বৈধ নয়। কারণ এ জমি ইতিপূর্বে ওয়াকফ হওয়ায় সরকারের স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে লিপি হয়েছে। বিষয়টি জবর-দখলের চেষ্টাকারিদের জানালেও তারা এ বিষয়ে কর্ণপাত না করে জবর-দখলের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নূর মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসা ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম জানান- এ পুকুরের আয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। পুকুরটি জবর-দখল হলে ধর্মীয় এ প্রতিষ্ঠানটি চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। তাছাড়া পুকুরটি মুসল্লীদের পাশাপাশি স্থানীয় মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যবহার করে আসছেন। তাই পুকুরটিকে জবর-দখলের অপচেষ্টা থেকে বাঁচাতে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে এলাকাবাসী জানান- মসজিদ-মাদ্রাসার পুকুর নিয়ে ষড়যন্ত্রকারিদের মূলহোতা ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের আমতলিয়াপাড়া এলাকার মৃত উলা মিয়ার ছেলে আবুল কাশেম মিজ্জি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে এলাকায় ধর্ম অবমাননাকর কথা বার্তা বলে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি, সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আবুল কাশেম মিজ্জি নিরীহ লোকজনের জমি দখল, একের পর এক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা দাবি, সহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
একই এলাকার বদিউল আলমের ছেলে টমটম গ্যারেজ এর মালিক জয়নাল আবেদিন জানান- কয়েকমাসপূর্বে তিনি আমতলিয়াপাড়া এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে তাতে টমটম গ্যারেজ চালু করেন। ওই সময় আবুল কাশেম মিজ্জি তার কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন এবং চাঁদা না দিলে এখানে ব্যবসা করতে দেবে না মর্মে হুমকী দেন। পরবর্তীতে চাঁদা না দেয়ায় তার গ্যারেজে টেলিভিশনে নীল ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছে মর্মে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে তাকে হয়রানি করে আসছে। এ ব্যাপারে তিনি এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মৃত আহমদ হোছাইনের ছেলে হাজ¦ী শফিউল আলম জানান- ১৯৯৩ সালে তিনি আবুল কাশেম মিজ্জির মাতা পাতলা বিবির কাছ থেকে ২০ শতক জমি ক্রয় করে ভোগদখল করে আসছে। পরবর্তীতে আবুল কাশেম মিজ্জি তার মা এ জমি রেজিষ্ট্রি দেয়নি মর্মে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে সিআইডির বিশেষজ্ঞ টিম রেজিস্ট্রি দলিলের টিপসই পরীক্ষা করে আবুল কাশেমের মাতা পাতলা বিবির টিপসইয়ের সাথে মিল পেয়ে প্রতিবেদন দেন। এরপরও আবুল কাশেম মিজ্জি সাম্প্রতিক সময়ে শফিউল আলমের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং দাবিকৃত চাঁদা না দিলে জমিটি জবর-দখলের হুমকী দেন। এতে নিরুপায় হয়ে তিনি (শফিউল আলম) গত ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবুল কাশেম মিজ্জির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৫৪২/২২। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য রামু থানাকে নির্দেশ দিয়েছে।
একই এলাকার মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে আবদুল মোনাফ জানিয়েছেন- তার বাড়ির পাশে আবুল কাশেম মিজ্জির মায়ের নামে ১৩ কড়া জমি থাকলেও জবর-দখলে রেখেছেন ১ কানি জমি। এমনকি তার বসত ভিটাও জবর-দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় তার নামে একে একে ৬/৭ টি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেছেন। তাঁর বসত ঘরে অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। কিন্ত আবুল কাশেম মিজ্জি ও তার সহযোগিরা বাড়িটি নির্মাণে বাঁধা দিচ্ছে। এ কারণে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবন পার করছেন। তিনি আরো জানান- আবুল কাশেম মিজ্জি ভ‚মিদস্যুতা, চাঁদাবাজির পাশাপাশি একজন বড় মামলাবাজও। তাঁর মতো এলাকার অনেকে এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবুল কাশেম মিজ্জি জানান- তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সত্য নয়। অনেকের বিরুদ্ধে তিনি কোর্টে মামলা করেছেন। মামলা থেকে বাঁচতে তারা এসব ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি আরো জানান- মসজিদ-মাদ্রাসার জমি একপক্ষ বিক্রি করেছে, আরেক পক্ষ থেকে ক্রয় করেছে। এতে তার কোন ভূমিকা নেই। এছাড়া কারও কাছ থেকে তিনি কখনো চাঁদাও চাননি।