মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
সাড়ে চার লক্ষ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার এবং ৯ লক্ষ ৫১ হাজার কিয়াত মিয়ানমারের মুদ্রা উদ্ধারের মামলায় মিয়ানমারের তিন নাগরিককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে দন্ডিতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন। একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিতরা হলো : মিয়ানমারের আরাকান জেলার আইকাফ থানার অনডাং এলাকার মৌং সা দু'র পুত্র এ খং সা, একই এলাকার স্যাং টোয়েং এর পুত্র মৌং চোং অং এবং মিয়ানমারের আরাকান জেলার আইকাফ থানার পেলিসং এলাকার মোঃ ইদ্রিস এর পুত্র মোঃ ইসহাক। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিতরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ ও এপিপি দীলিপ কুমার ধর রাষ্ট্র পক্ষে এবং আসামীদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হিসাবে অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম-৪ মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর রাত ৩ টার দিকে কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশনের একটি টিম টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে ছেরাদ্বীপের কাছে এক অভিযান চালিয়ে ৩ জন মিয়ানমারের নাগরিক সহ একটি নৌকা আটক করে। পরে আটককৃতদের দেহ তল্লাশি করে ৯ লক্ষ ৫১ হাজার কিয়াত মিয়ানমারের মুদ্রা উদ্ধার এবং ৩ টি বস্তাভর্তি ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এ খং সা, মৌং চোং অং এবং মোঃ ইসহাক-কে আসামী করে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ১৭/২০২০ ইংরেজি। জিআর মামলা নম্বর : ১০০৭/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৩৬১/২০২২ ইংরেজি।
মামলাটি বিচারের জন্য কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য্য করা হয়। রায় ঘোষণার দিনে বিজ্ঞ বিচারক কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আসামীদের ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) এর ১০ (গ) ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে উপরোক্ত রায় ঘোষণা করেন। মামলাটি চার্জ (অভিযোগ) গঠনের পর মাত্র ১১ মাসের মধ্যে রায় প্রদান করা হলো।
রায়ে দন্ডিতদের কাছ থেকে জব্দকৃত ৯ লক্ষ ৫১ হাজার কিয়াত মিয়ানমারের মুদ্রা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত এবং দন্ডিতদের সাজার মেয়াদ শেষ হলে আইনানুগ ব্যবস্থায় তাদেরকে মিয়ানমারে পুশব্যাক করার জন্য বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল কক্সবাজারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন।