সোয়েব সাঈদ, রামু:
কক্সবাজারের রামু উপজেলার সবচেয়ে ব্যস্ততম ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান চৌমুহনী স্টেশনে যানজট নিরসন, ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছেন রামু উপজেলা প্রশাসন। রবিবার, ৫ জানুয়ারি সকাল থেকে ১০ টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করেন রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা। অভিযান চলাকালে ৩০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানে উপজেলা পরিষদের পাশর্^বর্তী ফজল কোম্পানীর পেট্রোল পাম্পকে ২০ হাজার টাকা, চৌমহনী স্টেশনের মা ক্রোকারিজকে ৫ হাজার টাকা, নুর ক্রোকারিজের দুইটি দোকানকে ১০ হাজার টাকা, হোসেন ক্রোকারিজকে ৫ হাজার টাকা, মেহমান ক্রোকারিজকে ২ হাজার টাকা, এন আলম ক্রোকারিজকে ৫ হাজার টাকা, রংধনু গিফট প্লাসকে ২ হাজার টাকা, মেহরাজ ক্রোকারিজকে ৫ হাজার টাকা, হাবিব ক্রোকারিজকে ২ হাজার টাকা, মিস্টিরাজকে ৭ হাজার টাকা, মধুবনকে ২ হাজার টাকা, জিয়াবুল হকের পানের দোকানকে ৫০০ টাকা, মুন্নার দোকানকে দোকানকে ১ হাজার টাকা, প্রিয়ম ফুডসকে ৫ হাজার টাকা, মোক্তার হার্ডওয়ারকে ২ হাজার টাকা, আনিসুর রহমান স্টোরকে ২ হাজার টাকা, হাজী স্টোরকে ২ হাজার টাকা, মোহাম্মদীয়া স্টোরকে ৫ হাজার টাকা, সাদ্দাম স্টোরকে ১ হাজার টাকা, এইচএম জামান স্টোরকে ২ হাজার টাকা, মিজান স্টোরকে ২ হাজার টাকা, তাহের স্টোরকে ১ হাজার টাকা, সিএনজি সমবায় সমিতিকে ১০ হাজার টাকা, হেলথ রামু ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১০ হাজার টাকা, আয়ুব আলীর মুরগীর দোকানকে ১ হাজার টাকা, রাশেলের দোকানকে ১ হাজার টাকা এবং রামু সুপার শপকে ৫ হাজার জরিমানা করা হয়েছে।
অভিযান চলাকালে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো, রামু প্রেস ক্লাব সাধারণ সস্পাদক সোয়েব সাঈদ, চৌমুহনী বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, ফতেখাঁরকুল ইউপি সদস্য আজিজুল হক আজিজ, মো. ইউনুস উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও রামু থানা পুলিশ, আনসার ভিডিপি ও গ্রাম পুলিশের সদস্যরা অভিযান পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করেন।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভ‚ট্টো জানান- দীর্ঘদিন পর হলে ইউএনও’র অভিযানটি সফল হয়েছে। প্রায় ৫ ঘন্টার অভিযানে চৌমুহনী স্টেশনে অধিকাংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। চলাচলের ফুটপাত, নালা ও প্রধান সড়ক দখল করে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিলো।
চৌমুহনী বণিক সমবায় সমিতির সদস্য ও ফতেখাঁরকুল ইউপি সদস্য আজিজুল হক আজিজ জানান- অবৈধভাবে গড়ে উঠা ভ্রাম্যমান দোকান ও চলাচলের পথ দখল করায় চৌমুহনী স্টেশনে যানজট চরম আকার ধারণ করেছিলো। এখন স্টেশনটি চলাচলের উপযোগী হয়েছে। তিনি আরো জানান- সড়কের উপর যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজটে অতিষ্ঠ্য ছিলো যাত্রী-পথচারিরা। দোকানের সামনে দিনদিন নতুন স্থাপনা নির্মাণ ও ফুটপাত দখলের কারণে লোকজনের হাঁটাচলাও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
রামু প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদ জানান- চৌমুহনী স্টেশনের আশপাশে ও দূরদূরান্তের অসংখ্যা শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০ হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন চৌমুহনী স্টেশন হয়ে যাতায়াত করেন ভোগান্তিকে সঙ্গী করে। ময়লা-আবর্জনা আর খোলা নালার উদ্ভট দূর্গন্তে নাক চেপেও চলাচল করতে হয় শিক্ষার্থী সহ সচেতন জনসাধারণকে। ময়লা-আবর্জনা ও খোলা নালায় সার্বক্ষনিক দূর্গন্ধ লেগে আছে। সবমিলিয়ে চৌমুহনী স্টেশনে মানুষের দূর্ভোগ-দূর্দশা চরম আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউএনও’র এ অভিযান ভোগান্তির শিকার রামুবাসীকে স্বস্থি এনে দিয়েছে। তবে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে পারলেই এর সুফল পাবে মানুষ।
কয়েকজন পথচারির সাথে কথা বলে জানা গেছে- রামু বাইপাস মরিচ্যা সড়ক ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রশস্থ করা হলেও এর সুফল চৌমুহনী সহ আশপাশের লোকজন ভোগ করতে পারছেনা। এখানে সড়ক দখল করে চলছে দোকানপাট, গাড়ি পার্কিং। চৌমুহনী স্টেশনের ব্যস্ততম স্থানেই রামু লাইন ও কক্স লাইন সার্ভিসসহ বিভিন্ন যানবাহনের যত্রতত্র পার্কিং যানজটকে আরো প্রকট করে তুলেছে। সিএনজি, ইজিবাইক (টমটম ও মিনি টমটম) সহ বিভিন্ন ছোট গাড়িগুলোও স্টেশনে যত্রতত্র পার্কিং করায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তাই আরও অভিযান চালিয়ে গাড়ি পার্কিংয়েও নিয়মনীতি তৈরী করে দিতে হবে।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা জানান- চৌমুহনী স্টেশনে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক স্থাপনা নির্মাণ করে ফুটপাত ও সড়ক দখল করা হয়েছে। এ জন্য অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। যানজট নিরসন ও সড়ক দখলমুক্ত করতে এ ধরনের অভিযান এখন থেকে নিয়মিত পরিচালনা করা হবে। সড়কে কোন গাড়ি রাখলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সাথে স্টেশন ও আশপাশের সড়ক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখারও উদ্যোগ নেয়া হবে।