মারুফ সরকার:
বর্তমান জামানায় সুন্দরী হতে কে না চায়। আজকের যুগে সুন্দর হতে চায় না এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার পর মেয়েদের জীবনধারা এবং অভ্যাসে পরিবর্তন হয়। এখন দিন বদলের পালা। প্রত্যেক মেয়েরাই সুন্দর হওয়া এবং সুন্দর হয়ে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে।মডেল ও অভিনেত্রী :কাজী জারা
মেয়েদের সুন্দর হওয়ার এই চেষ্টাকে সফল করতে নানা উপায় খুঁজে বের করেছেন রূপ বিশেষজ্ঞরা। আসুন তাহলে জেনে নিন বিজ্ঞান সম্মতভাবে কিভাবে মেয়েরা নিজেদের সুন্দরী করে তুলতে পারেন।
ঘুম: প্রথমে ঘুম দিয়ে শুরু। ঘুম ভালো না হলে তার প্রভাব চোখে ও মুখে পড়ে, সেকথা আমরা জানি। ঘুম শরীরের হরমোনে প্রভাব ফেলে, শরীরের ফ্যাট ক্ষয় করে এবং শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে মন-মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। রাতে যে নারী ভালো ঘুমায় সকালে তাকে দেখতে সুন্দর এবং তরতাজা লাগে। শুধু তাই নয়, সারাদিনই সে ফিট থাকে।
বিউটি স্লিপ: স্টকহোমের কারোলিনস্কা ইন্সটিটিউট সুইডেনের মেয়েদের মধ্যে ঘুমের প্রভাব নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। সে সময় কয়েকজন মেয়েকে ৮ ঘণ্টা এবং অন্যদের মাত্র ৫ ঘণ্টা ঘুমাতে দেয়া হয়। তারপর সকালবেলার তোলা হয় তাদের সকলের ছবি। বিচারকদের মতে, ৫ ঘণ্টা নয়, পুরো ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরের তোলা ছবিতে মেয়েদের দেখতে অনেক সুন্দর, সজীব এবং ফিট লেগেছে। অর্থাৎ ‘বিউটি স্লিপ’ যে শুধু কথার কথা নয়, তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
ডায়াবেটিস ‘টাইপ টু’: যে নারীর প্রায় প্রতি রাতে ৭ ঘণ্টার কম ঘুম হয়, তার ‘ডায়াবেটিস টাইপ টু’ হওয়ার ঝুঁকি আছে, এ তথ্য ডেনমার্কের হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে। গভীর ঘুমের সময় শরীরের রক্তনালী প্রশস্ত হয় এবং তখন ভালোভাবে পুষ্টি চলাচল করতে পারে। ফলে ত্বক হয় মসৃণ আর সজীব৷।
হাসি বয়স কমায়: যাদের যথেষ্ট ঘুম হয়, তাদের স্বাভাবিকভাবেই মন ও মেজাজ ভালো থাকে। তারা স্বাভাবিকভাবেই বেশি হাসেন এবং তাদের চেহারা দেখেও সহানুভূতিশীল মনে হয়। যারা কম হাসেন বা মুখ বিষণ্ণ করে রাখেন তাদের চেয়ে হাসিখুশি মানুষকে যে দেখতে সুন্দর, এমনকি দেখলে তাদের বয়সও কম বলে মনে হয় ,সেকথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সৌন্দর্য আসে ভেতর থেকে: ‘ক্রিমের পরিবর্তে গাজর, মাস্কের বদলে আম’। অর্থাৎ সুন্দর হতে চাওয়া মানে এই নয় যে, সব সময় দামি কসমেটিক ব্যবহার করতে হবে। বরং তার বদলে ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়াই উত্তম। বেশ কিছু সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, যারা কম ফল ও সবজি খায়, তাদের তুলনায় যারা বেশি সবজি এবং ফল খায়, তাদের মুখে কম বলিরেখা পড়েছে। কাজেই ত্বকের ওপরে ক্রিম বা মাস্ক মাখার চেয়ে গাজর বা আমের মতো ফল খেলেই উপকার বেশি পাওয়া যায়।
ত্বকের জন্য চাই যথেষ্ট পুষ্টি: স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ত্বক হয় টানটান, চুল ও নখ হয় সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। বয়সকে জয় করতে নিয়মিত রঙিন সবজি, অর্থাৎ গাজর, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, ব্রকলি ইত্যাদি খেতে হবে। সুন্দর ত্বকের জন্য প্রয়োজন মাছ এবং সবুজ শাক-পাতা বা স্যালাদ। ধূমপান, মদ্যপান এবং অতিরিক্ত সূর্যের আলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা প্রয়োজন। প্রয়োজনে প্রতিদিন ২ লিটার পানি পান করা প্রচুর ভিটামিন সি খাওয়া, যেমন লেবু বা কমলা জাতীয় ফল।
ব্যায়াম করুন সুন্দর থাকুন: সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন, যে কোনো ধরনের ব্যায়াম বা খেলাধুলা খুবই জরুরি। ব্যায়াম শরীরকে ঝরঝরে ও সজীব রাখে এবং স্ট্রেস ভুলিয়ে দিতে বড় ভূমিকা পালন করে। দৈনন্দিন কাজের চাপের পর যে করেই হোক কিছুটা সময় নিজের জন্য ব্যয় করা খুবই দরকার। তাছাড়া ঘরের নানা কাজও এক ধরণের ব্যায়াম আর এই ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের বাড়িও পরিষ্কার থাকবে, শরীর ও মন দুটোই থাকবে সুন্দর।
বিউটি স্ন্যাকস: শুধু বিউটি স্লিপ নয়, চাই বিউটি স্ন্যাকসও। লাঞ্চ ব্রেকে সাদা দইয়ের সাথে বিভিন্ন ফল মিশিয়ে খেলে পাওয়া যায় দিনের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ই ইত্যাদি। যা আপনাকে অসংখ্য নারীর মাঝে করে তুলবে উজ্জ্বল আর আকর্ষণীয়।
ব্যক্তিত্ব: সুন্দর ফিগার, মসৃণ ত্বক আর শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব যে কোনো মেয়েকে করে তোলে সুন্দর ও আকর্ষণীয়। তার সঙ্গে সামান্য মেকআপ আর মিষ্টি একটু হাসি থাকলে যে কেউই হতে পারে অনন্যা।