চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি’র উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী বর্ণীল সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। এ আয়োজনে চরপাথরঘাটার ব্রিজঘাট সিডিএ মাঠে চলছে চাঁটগাইয়া সাংস্কৃতিক মেলাও।
শুক্রবার (৩ মার্চ) বিকেল নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে পুরষ্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে তিনদিন ব্যাপী এ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।
চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র ও কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সহযোগিতায় মূল আকর্ষণ ছিলো সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতা।
কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড় ফিরিঙ্গিবাজার ঘাট থেকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের চরপাথরঘাটা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। বাইচ দেখতে দু’পাড়ে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামলেও অনেকেই আয়োজন কমিটির সমালোচনা করতে দেখা যায়। কেনোনা, নদী পাড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা না থাকায় বিশৃঙ্খল পরিবেশে ভাড়া নৌকা আর ভাড়াটে মাঝিদের নিয়ে এ প্রতিযোগিতা তাঁর প্রকৃত জৌলস হারিয়েছেন বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
মেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক হাজী ছাবের আহমদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
সাংস্কৃতিক কর্মী মিসেস চুমকির সঞ্চলনায় প্রধান বক্তা ছিলেন ডায়মন্ড সিমেন্টের চেয়ারম্যান আজিম আলী। এতে গুণিজন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত এডভোকেট মনজিল মোরসেদ। সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোলায়মান তালুকদার, ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, মেলার প্রধান সমন্বয়ক শাহেদুর রহমান শাহেদ, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি জাফর আহমদসহ প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী রক্ষার দায়িত্ব চট্টগ্রাম বন্দরের। এই কর্ণফুলী নদী দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। অবৈধভাবে কর্ণফুলী নদীর তীর দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ বঙ্গবন্ধু সারাজীবন নদী ও নৌকাকে ভালোবেসেছেন। সুতরাং আমাদের চট্টগ্রামকে বাঁচতে হলে কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে হবে।’
সাম্পান প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন চট্টগ্রাম ইছানগর-বাংলাবাজার সাম্পান মালিক সমিতি, ইছানগর সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতি, চরপাথরঘাটা-ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতি, চরপাথরঘাটা-ব্রিজঘাট ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, পুরাতন ব্রিজঘাট মাছ ব্যবসায়ী সমিতিসহ একাধিক লাল নীল সবুজ দল। প্রতিটি সাম্পানে ছিলেন প্রতিযোগি দল। পরে বাইচ প্রতিযোগীতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবিতে শতাধিক সাম্পান ভাসিয়ে ‘সাম্পান শোভাযাত্রা’ পালন করা হয়। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সহযোগিতায় এ কর্মসূচির আয়োজন করেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমি ও কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি। জনসচেতনতা সৃষ্টির অংশ হিসেবে এ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।