ইউসুফ আরমান

আমাদের দেশে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি কারণে অকারণে কিংবা কোনো অজুহাতে। কখনও রোজা, কখনও ঈদ বা কখনও জাতীয় বাজেট ঘোষণার কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা এক নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই অশুভ প্রবণতা লক্ষ করে আসছি আমাদের সেই ছোটবেলা থেকে এবং আজও সেই একই ধারা অব্যাহত আছে। বরং বলা যায় যে সেই প্রবণতা এখন বেড়ে গেছে মাত্রাতিরিক্ত হারে।

দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সিন্ডিকেটের কারণে নিম্নমানের আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জ্বালানি তেল ও সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বর্তমান সময়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দ্রব্য বা সেবার ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়াই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সম্প্রতি চাল, ডাল, তেল, সবজি থেকে শুরু করে প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কোনোভাবেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের লাগাম টানা যাচ্ছে না। এতে করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে চরম দুর্দশা দেখা দিচ্ছে।

হঠাৎ করেই বাংলাদেশে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির উপযুক্ত কোনও কারণ হাজির করতে পারেনি ব্যবসায়ী কর্তৃপক্ষ। বরাবরের মতো কৃত্রিম সংকট, সরবরাহে ঘাটতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলেছে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো। অস্বস্তিতে পড়েছে সরকারও। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কথা হলেও আসলে তা সত্যি নয়। বরং আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম আমাদের চেয়ে অনেক কম। আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতেই বা বৃদ্ধি পাবে কেন! হঠাৎ করে প্রক্রিয়াজাতকরণ কোনও খরচ কি বেড়েছে? আর আন্তর্জাতিক দোহাই দিয়ে বৃদ্ধির কারণ ব্যবসায়ীরা দেখিয়েই যখন থাকবে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে তারা কি স্বেচ্ছায় কখনও দাম কমিয়েছে! পণ্যের মূল্য নির্ধারণ, আমদানি শুল্কে ছাড় এবং ভর্তুকি দিয়েও বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ঠেকাতে দেশে কী পরিমাণ ধান হয়, ওই ধান থেকে কী পরিমাণ চাল উৎপাদন হতে পারে, মিল মালিকদের গুদামের ও নিত্যপণ্যের মজুতদারির হিসাব-নিকাশ এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। জরুরি হয়ে পড়েছে মিল মালিকেরা ধান কত দামে ক্রয় করেছিল এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে কত খরচ হয়েছে সেই হিসাব-নিকাশের। খাদ্যের অভাবে এই পৃথিবীতে কখনও পণ্যের দাম বাড়াতে হয়নি, সংকট লাগেনি।

পণ্যমূল্যের বাস্তবতা কিন্তু সরকারি হিসাবের চাইতেও অনেক বেশি৷ গত পাঁচ বছরে জীবনধারনে অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্যের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে৷ এটা আমি বলছি না, এটা কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মনিটরিং সেলের তথ্য৷

গত পাঁচ বছরের মধ্যে করোনা খেয়ে দিয়েছে দুই বছর৷ তারপর থেকে বাজারে গেলেই সমস্যায় পড়তে হয়। চাল কিনলে মাছ কিনতে হিমশিম খেতে হয়। এর মধ্যে শাক-সবজি, মশলা কিনতে গেলেই জান বেরিয়ে যায়। দ্রব্যমূল্যের এমন লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি আর কত চলবে!