অনলাইন ডেস্ক: ঢাকার সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন।
মামলায় তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রমনা মডেল থানার পরিদর্শক আবু আনছার। আবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এলাকা থেকে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে জামিনে মুক্তি দিলে তদন্তে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এহসানুল হক সমাজী ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার এ মামলায় জামিন চেয়ে তার আবেদন করে শুনানি করেন।
শুনানিতে আসামির আইনজীবীরা দাবি করেন, বক্তব্যটি একজন দিনমুজুরের হলেও ছবি ছাড়া হয়েছিল একজন শিশুর। এটা ভুল ছিল। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে ভুল স্বীকার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তাই এখানে মামলার হওয়ার মতো কিছু থাকতে পারে না। এ মামলার চলতে পারে না। তাই আসামি জামিন পেতে পারেন।
রাষ্ট্রপক্ষে রমনা থানা জিআরও পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নিজামুদ্দিন ফকির জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এর আগে গতকাল বুধবার ভোর চারটার দিকে সিআইডির পরিচয়ে শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যায় সিআইডি। রাতে তাকে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এরপর আজ সকাল ১০টার দিকে তাকে ঢাকার চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজতখানায় এনে রাখা হয়।
এরও আগে গত বুধবার রাতে সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া (৩৬) নামের এক যুবলীগ নেতা বাদী হয়ে শামসুজ্জামানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলো একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে। প্রথম আলো পত্রিকা অফিস থেকে সংবাদটি শেয়ার করে। সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি শিশুটির নাম জাকির হোসেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়ে কি করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব। সামাজিক মাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। সংবাদটি দেশ বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন।
এজাহারে বলা হয়, এই ঘটনায় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সোনালি গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণসহ বহিঃবিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতা দিবসের দিনে এই সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বধীনতা অর্জন নিয়ে আলোনা-সমালোচনা শুরু হয়।
এতে বলা হয়, পরবর্তীতে ৭১ টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্বৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। শিশুটির বিষয়ে ভুল তথ্য, নাম পরিচয়ও ভুল দেওয়া হয়েছে। পরে শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে এই ছবি তুলেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এমন সংবাদ করেছে প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদক।
এদিকে একই ঘটনায় বুধবার মধ্যরাতে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, শামসুজ্জামান,সহযোগী ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে রাজধানীর রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন আবদুল মালেক ওরফ মশিউর মালেক নামের এক আইনজীবী।
-আমাদেরসময়
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।