আব্দুল মালেকঃ
একটি উক্তি আছে "উপরে ফিটফাট ভেতরে সদর ঘাট"। ঠিক এমনটাই হয়ে পড়েছে সেন্টমার্টিন জেটি ঘাট। চলছে কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে।
তলা ফেটে গেছে সেন্টমার্টিন প্রবেশদ্বারে একমাত্র জেটির। ১০ হাজার স্থানীয় বাসিন্দারা সারা বছর এবং পর্যটন মৌসুমে হাজার হাজার পর্যটক ও প্রতিদিন নৌবাহিনী - কোষ্ট গার্ডের জোয়ানরা ওঠানামা করছে এই জেটি দিয়ে।
গেলো ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় চিত্রাং ও ঘূর্ণিঝড় কোমেনের আঘাতে ভেঙে জেটির পন্টুন তছনছ হয়ে গিয়েছিলো। জাহাজ মালিক ও স্থানীয়রা কাঠ বাঁশ দিয়ে জোড়াতালি দিলেও কক্সবাজার জেলা পরিষদ কাঠ বাঁশের জোড়াতালি ভেঙে জং ধরা লোহা দিয়ে কোনোমতে বসিয়ে দিলো জেটির পন্টুন।
জেটির উপরের অংশ ফিটফাট করে দিয়ে গেলেও নিচের অংশ ঠিকই সদর ঘাট রয়েই গেলো।
সেন্টমার্টিন সার্ভিস বোট মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলম মেম্বার বলেন,লক্কর ঝক্কর হয়ে গেছে এই জেটি। পুরো জেটি অর্থাৎ জেটির পূর্ব -দক্ষিণের সব অংশেই তলা ভেঙে পড়েছে। নিচের কিছু কিছু অংশে কয়েকটামাত্র লোহার রডের মাথায় ঝুলে আছে জেটির পিলার। লোহায় মরিচা ধরে পানিতে ভেঙে পড়েছে পিলারের অংশ। বের হয়ে আছে ঝং ধরা লোহা। জেটির প্রায় ৮ ইঞ্চি ঢালাইয়ের মধ্যে পন্টুনে যাওয়ার আগে আনুমানিক ৩০ ফিট জেটির নিচের অংশে ২ ইঞ্চিও ঢালাই নেই। ঢালাইয়ের টুকরো টুকরো অংশ ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক আগেই। নিচের অবস্থা দেখলে যা মনে হচ্ছে- সামনের বর্ষায় এই জেটি আর থাকবে না।
সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) এর সভাপতি তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, সেন্টমার্টিনের জেটি একদম ঝুকিপূর্ণ হয়ে গেছে। অনেক আগের জেটি এটি। তাছাড়া বর্ষায় বঙ্গোপসাগর খুব উত্তাল থাকে। বর্ষায় বড় বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় জেটির কিছু কিছু অংশ ভেঙে যায়। আবার পর্যটন মৌসুমের শুরুতে জাহাজ মালিক ও জেলা পরিষদের সমন্বয়ে মেরামত করা হয়। কিন্তু এটি পার্মানেন্ট সমাধান নই। সেন্টমার্টিনে একটি নতুন জেটির খুবই জরুরী।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ইং তারিখ সেন্টমার্টিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো একাদশ জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভা। স্থায়ী কমিটির সভাপতি র,আ,ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী এমপি মহোদয়ের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতি মন্ত্রী মাহাবুব আলী এমপি মহোদয়। অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন, ইন্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি মহোদয়, মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক, উখিয়া টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি মহোদয়সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
আমি উক্ত অনুষ্ঠানে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একসাথে উপস্থিতি পেয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলান, সেন্টমার্টিনে নতুন একটি জেটি দরকার।
আমাদের দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জন্যে কয়েকটা দাবীর মধ্যে এটাও একটা ছিলো। দ্বীপের নতুন একটি জেটি খুবই জরুরী। আমি আরো বলেছিলাম, বর্তমান জেটি যেটি আছে আগামী বর্ষায় বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ পুরাতন হয়ে গেছে এই জেটি। পর্যটক ও স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। সেদিনের অনুষ্ঠানে অতিথিগণ সেন্টমার্টিনে নতুন জেটির নির্মাণে আশ্বস্ত করেন।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক মার্শাল বলেন, সেন্টমার্টিনের জেটি গত কয়েক বছর ধরে একটু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। প্রতি বছর নষ্ট অংশ মেরামত করা হয়। বঙ্গোপসাগরের বড় বড় ঢেউর ধাক্কা মোকাবেলা করে সেন্টমার্টিন জেটি দাঁড়িয়ে আছে। পুরোনো হয়ে যাওয়ায় নিচের অংশ ভেঙে যাচ্ছে। প্রতিবছর মৌসুমের শুরুতে মেরামত করা হলেও জীবন ঝুঁকি থেকে যায়। এক্ষেত্রে নতুন জেটির কোনো বিকল্প নেই। ২০১৮-১৯ইং সালে নতুন জেটি নির্মাণে বাজেট হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার কারণে এটি থেমে যায়।
যেকোনো মুহুর্তে এই জেটি ভেঙে ঘটতে পারে মৃত্যুর মতো বড় কোনো দুর্ঘটনা। রানা প্লাজার মতো ভেঙে শতশত মানুষের মৃত্যু হলে তখন হয়তো নড়েচড়ে বসবে সংশ্লিষ্ট জল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্তাবাবুরা এমনটাই মনে করছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় জনগোষ্ঠীরা।
দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন ঝুঁকি থেকে বাঁচতে নতুন জেটি নির্মাণের দাবী জানান দ্বীপবাসী।