নুরুল আলম সাঈদ, নাইক্ষ্যংছড়ি:
চৈত্র সংক্রান্তিতে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে পাহাড়ে এখন বৈসাবি উৎসবের আমেজ বইছে। পাহাড়ীদের এই উৎসব তিনটি আলাদা নামে হলেও সমতলের মানুষের কাছে তা বৈসাবি নামে পরিচিত। বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় উপজাতীয় এই বৈসাবি পালনের এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রীতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বুধবার (১২ এপ্রিল ) বিকাল ৪ টায় নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি জোনের আওতাধীন উপজাতী সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব ‘বৈসাবি’ উদযাপন উপলক্ষ্যে ১০টি ‘বৈসাবি’ উদযাপন কমিটির প্রতিনিধির কাছে নাইক্ষ্যংছড়ি জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ রেজাউল করিম প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে উপজাতী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির নিকট আর্থিক অনুদান (নগদ অর্থ) ও পুরস্কার হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এ্যাডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন রাফি-উস-হাসান, নাইক্ষ্যংছড়ি জোন, বিজিবি সদস্যগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকবৃন্দ।
১১ বিজিবির অধিনায়ক জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল রেজাউল করিম বলেন, এই অঞ্চলের শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার নিমিত্তে নাইক্ষ্যংছড়ি জোন কর্তৃক ভবিষ্যতেও এ ধরনের কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।এবং তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
জানা যায়, সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ, নারী ও শিশু পাচার রোধ ও অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনসহ পার্বত্য এলাকার সাধারণ জনগণের শান্তি, সম্প্রীতি, শিক্ষার মান উন্নয়ন, খেলাধুলা এবং জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি জোন শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জানা যায়, পাহাড়ের মানুষের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি তথা বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক পালন করা হচ্ছে এবার সারম্বরে। আলাদা নামে হলেও চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা ও মারমা জাতিগোষ্ঠির মানুষ একযোগে পালন করে এ উৎসব। চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসুক, মারমারা সাংগ্রাই আর তংচঙ্গ্যারা বিষু নামে এ সামাজিক উৎসব পালন করে। তবে বাংলা ভাষাভাষি মানুষ এ উৎসবকে বৈসাবি নামেই চেনে।
উৎসবকে ঘিরে নানান আয়োজন শুরু হয়েছে পাহাড়ি গ্রামে। সপ্তাহ জুড়ে চলবে এ উৎসব। আর এই বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে সকল ক্ষুদ্র জাতিকে এক কাতারে নিয়ে আসে প্রতিবছর।
আগামী ১২ এপ্রিল নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে মূল উৎসব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাহাড়ে বৈসাবির উৎসব শুরু হয়। গ্রামে-গ্রামে চলছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর ঐতিহবাহী নানা খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি। হাট-বাজারগুলোতে চলছে কেনাকাটার ধুম।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান পর্যাক্রমে আনন্দ র্যালি, মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ওয়াটার ফেস্টটিভ্যাল বা পানি খেলা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় গড়িয়া নৃত্য’র আয়োজন করেছে। এবার উৎসব মুখর পরিবেশে বৈসাবি পালিত হবে এমনি প্রত্যাশা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর।
রাঙ্গামাটি সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবিকে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু নামে পালন করে থাকে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রনে বৈসাবি এক বৈচিত্রময় রূপ ধারণ করেছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।