সোয়েব সাঈদ, রামু:
কক্সবাজারের রামুতে হাসপাতালে নেয়ার পথে জরাজীর্ণ সড়কে অটোরিক্সায় সন্তান প্রসব করেছে এক নারী। বুধবার, ১৭ মে সকালে রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মনিরঝিল গ্রামের রামু-সোনাইছড়ি সড়কে এ ঘটনা ঘটে। হতভাগ্য গৃহবধু আয়েশা ছিদ্দিকা (২২) মনিরঝিল গ্রামের ২ নং ওয়ার্ডের নুরুল ইসলামের স্ত্রী।
আয়েশা ছিদ্দিকার শ^াশুড়ি খতিজা বেগম জানিয়েছেন- বুধবার, ১৭ মে সকালে তার পুত্রবধুর প্রসব বেদনা শুরু হয়। কিন্তু গ্রামের প্রধান সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় কোন গাড়ি পাচ্ছিলেন না। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর একটি অটোরিক্সা এনে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় পুরো সড়ক আরো বেহাল হয়ে পড়েছে। ফলে অটোরিক্সাটি চরম ঝ‚ঁকি নিয়ে হেলেদুুলেই চলছিলো। কয়েকবার গাড়িটি আটককেও যায়। এতে গর্ভবতী আয়েশা যন্ত্রনায় আর্তচিৎকার দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে মনিরঝিল সেতুর কাছাকাছি পৌঁছতেই গাড়ির উপর সন্তান প্রসব হয় আয়েশার।
ওই অটোরিক্সায় ছিলেন-কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মনিরঝিল গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মীর কাশেম। তিনি জানান- বাজারে মাছ কিনতে যাওয়ার জন্য বের হয়ে এ অটোরিক্সায় (সিএনজি) উঠেছিলেন। জরাজীর্ণ সড়কে গাড়িটি ঝুঁকি নিয়ে চলছিলো। কিছুদুর যেতেই গাড়িতে থাকা নারীর সন্তান ভ‚মিষ্ট হয়।
আয়েশার স্বামী (নবজাতকের পিতা) নুরুল ইসলাম জানান- স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে তিনি, মা এবং শ^াশুড়ি সহ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সড়কের নাজুক অবস্থার কারণে পথেই গাড়িতে পুত্র সন্তান ভ‚মিষ্ট হয়। ওই সময় মা ও নবজাতকের মৃত্যুরও আশংকা ছিলো। প্রসবের পর তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমানে মা ও শিশু চিকিৎসা শেষে বাড়িতে অবস্থান করছে। তিনি অবিলস্বে মনিরঝিল গ্রামের প্রধান সড়কটি সংস্কার করে গ্রামবাসীকে দূর্ভোগের কবল থেকে রক্ষার আবেদন জানান। তার মতো পরিস্থিতিতে যেন আর কাউকে পড়তে না হয়।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মালেক জানান- সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এলাকার লোকজন এমনিতেই জনপ্রতিনিধিদের উপর ক্ষেপে আছে। এরমধ্যে সড়কে গাড়ি আটকে গিয়ে সন্তান প্রসবের ঘটনায় জনমনে আরও বেশী ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তিনি আরও জানান- বর্তমানে মনিরঝিল গ্রামের ৩টি ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক ও ছোট-বড় সব সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এমনকি সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় এসব সড়কে এখন হেঁটেও চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অথচ এ সড়কে মনিরঝিল গ্রামের ১০ হাজারের বেশী জনসাধারণ এবং পাশর্^বর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে আসছে। কৃষি নির্ভর এলাকা হওয়ায় কৃষি পণ্য আনা-নেওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষকরাও চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামশুল আলম জানিয়েছেন- জরাজীর্ণ সড়কে সিএনজি অটোরিক্সায় গৃহবধুর সন্তান প্রসবের বিষয়টি সত্য। ওই গাড়িতে পরিষদের একজন মেম্বারও ছিলেন। এ ঘটনা খুবই দূঃখজনক এবং পরিষদের জন্য লজ্জাজনক। তিনি আরো জানান-দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ওই গ্রামের সবকটি সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। রাতারাতি সব ঠিক করা সম্ভব নয়। তবে তিনি স্থানীয় সাংসদের সাথে সমন্বয় করে বর্ষা মৌসুমের আগেই গ্রামের প্রধান সড়কটি চলাচলের উপযোগী করবেন বলে জানান।
রামু উপজেলা পরিষদর নারী ভাইস চেয়ারম্যান আফসানা জেসমিন পপি জানিয়েছেন- কয়েকদিন আগে তিনি ওই গ্রামে গিয়ে সবকটি সড়কের বেহাল অবস্থা দেখেছেন। খানাখন্দকে ভরপুর এ সড়কে একজন নারী বিনা চিকিৎসায়, চরম যন্ত্রনা সয়ে সন্তান প্রসব করেছেন। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটি তাঁর জন্য লজ্জাকর ও দূঃখজনক। তিনি আরও জানান- অচিরেই তিনি সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সড়কটি সংস্থারের জন্য প্রাণপন চেষ্টা শুরু করবেন।