মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

পাঁচ লক্ষ ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় এক রোহিঙ্গা সহ ৭ জনকে যাবজ্জীবন (৩০ বছর) কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে দন্ডিতদের প্রত্যেককে ২ লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সোমবার (২২ মে) এ রায় ঘোষণা করেন। একই কার্যালয়ের জেলা নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

যাবজ্জীবন দন্ডিত আসামীরা হলো : কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছরার সাবরাং ইউনিয়নের মৃত খুইল্ল্যা মিয়া ও ছুবিয়া খাতুনের পুত্র মোঃ মহররম আলী, একই ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ ডাঙার পাড়ার দুদুমিয়া বলী ও হামিদা খাতুনের পুত্র মোঃ আমান উল্লাহ, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বড় হাবির পাড়ার মৃত রশিদ আহমদ ও খতিজা বেগমের পুত্র নুর আলম, একই উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের চান্দলী পাড়ার মৃত আবু তালেব ও পর্দা বানুর পুত্র আবদুল মুনাফ, উখিয়া উপজেলার বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের জামাল হোসেন ও রকিমা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা আবদুল পেডাম, টেকনাফ উপজেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বড় হাবির পাড়ার ফয়সল আহমদ প্রকাশ ফজল আহমদ ও রহিমা খাতুনের পুত্র আ: শুক্কুর এবং একই উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের চান্দলী পাড়ার আবুল হোসেন প্রকাশ হাশেম ও আমেনা খাতুনের পুত্র মোঃ জাহিদ হোসেন। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ এবং আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসাইন, অ্যাডভোকেট আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও অ্যাডভোকেট তাজমিন হুদা চৌধুরী সেতু মামলাটি পরিচালনা করেন।

মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডিত আসামী রোহিঙ্গা শরনার্থী আবদুল পেডামকে সাজা ভোগের পর তাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রায়ে কক্সবাজারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টা ২০ মিনিটের দিকে টেকনাফ কোস্ট গার্ডের একটি টিম টেকনাফের বাহারছরা ইউনিয়নের বড়ডেইল বরাবর বঙ্গোপসাগরে এক অভিযান চালিয়ে মায়ানমারের দিক থেকে আসা একটি যান্ত্রিক বোট আটক করে এবং বোট থাকা মোঃ মহররম আলী, মোঃ আমান উল্লাহ, নুর আলম, আবদুল মুনাফ, রোহিঙ্গা আবদুল পেডাম, আ: শুক্কুর এবং মোঃ জাহিদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৫ লক্ষ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় কোস্ট গার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এম. রিপন মিয়া বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ৪৯/২০২০ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৭৮৯/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৯৩/২০২২ ইংরেজি।

বিচার ও রায় :
মামলাটি বিচারের জন্য ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা। মামলায় ৬ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, সাক্ষীদের আসামীদের পক্ষে জেরা, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সোমবার মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। রায় ঘোষণার দিনে আসামী মোঃ মহররম আলী, মোঃ আমান উল্লাহ, নুর আলম, আবদুল মুনাফ, রোহিঙ্গা আবদুল পেডাম, আ: শুক্কুর এবং মোঃ জাহিদ হোসেনকে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৮/৪১ ধারা সহ ৩৬(১) এর ১০(গ) ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। দন্ডিতদের প্রত্যেককে একইসাথে ২ লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডিত আসামী রোহিঙ্গা আবদুল পেডামকে সাজা ভোগের পর তাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রায়ে কক্সবাজারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।