সংবাদ প্রতিবেদন:

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বৈশ্বিক আগ্রহ ও চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাঙালি জাতির ভাগ্য গঠনে অবাধ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করে সভার আলোচকগণ নির্বাচনকে প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের একটি ভিত্তিপ্রস্তর বলে আখ্যা দেন। জনগণকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন ।

গতকাল রাতে বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক এই আলোচনা সভার আয়োজন করেন। কানাডার সেন্ট্রাল আলবার্টা থেকে ভার্চুয়াল এ আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি কানাডা প্রবাসী লেখক ও গবেষক, ‘স্টেপ টু হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশনের’ স্পেশাল প্রজেক্ট কমিটির চেয়ারপারসন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও শিক্ষানুরাগী কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী। আলোচকদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) এর সাবেক পরিচালক ড. আনোয়ার জাহিদ, এটিএন বাংলার চিফ রিপোর্টার একরামুল হক সাঈম, অধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী আলী আকবর মাসুম, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল ও খায়রুল আহসান মানিক, কানাডার ‘স্টেপ টু হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশন’ এর সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন, দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক শামসুল হাবীব। এছাড়াও অংশ গ্রহণ করেন এসরার জাহিদ খসরু, এহতেশাম ইকবাল ও ইভানা হোসাইন প্রমুখ।

উদ্বোধনী ভাষণে দেলোয়ার জাহিদ বলেন সামনের দিনগুলিতে বাংলাদেশে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, বাধার মুখোমুখি হবে , তবে আমাদের সম্মিলিত দৃঢ়তা এবং পেশাদারিত্ব সেগুলিকে অতিক্রম করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি । আমাদের আদর্শ খুবই স্পষ্ট—নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অখণ্ডতা, পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন এবং সেগুলো রিপোর্ট করা। আমাদের পর্যবেক্ষণগুলি একটি বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ এবং ব্যাপক প্রতিবেদনের ভিত্তি তৈরি করবে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। পর্যবেক্ষণে চিহ্নিত যেকোনো ত্রুটির সমাধান করতে আমাদের সাহায্য করবে। এ বিষয়ে মিডিয়ার সবাত্মক সহযোগিতা পাওয়া জরুরি।

জাহিদ বলেন আপনাদের প্রত্যেককে অত্যন্ত সততা, স্বাধীনতা এবং বস্তুনিষ্ঠতার সাথে বিষয়গুলো বিবেচনা করার অনুরোধ করছি। আমাদের সমস্ত কর্মে স্বচ্ছতা, নির্ভুলতা ও অ-দলীয় নীতির দ্বারা পরিচালিত হতে হবে । এখানে আমাদের কাজ অত্যাবশ্যক, এবং অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে যে এটি সর্বোচ্চ স্তরের পেশাদারিত্বের সাথে পরিচালিত হচ্ছে এবং আমরা সে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলিকে সমুন্নত রাখতে হবে ।

আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন আমাদের রাজনীতি সমাজে অসহনশীল পরিবেশ তৈরি করে.. একটি বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণে কৌশলগত পরিকল্পনা ও টার্মস অব রেফারেন্স প্রয়োজন যাতে করে একটি কর্ম প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা লাভ করে.

ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন বাংলাদেশে নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং অখণ্ডতা নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি গণতান্ত্রিক নীতি সমুন্নত রাখতে এবং নাগরিকদের অধিকার রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন প্রদান করে, বিভিন্ন পর্যায় যেমন ভোটার নিবন্ধন, প্রচারণা কার্যক্রম, ভোটদান এবং ভোট গণনা পর্যবেক্ষণ করে এ প্রক্রিয়ায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

একরামুল হক সাঈম বলেন সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন গুলোকে যদি আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক করা যেতো তাহলে প্রক্রিয়া আরো প্রতিযোগিতামূলক হতো ও আরো বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতো।

আলী আকবর মাসুম বলেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। পর্যবেক্ষণ অনিয়ম, ভোটারদের ভয় দেখানো বা যেকোনো ধরনের জবরদস্তি শনাক্ত করতে সাহায্য করে, যা সময়মতো হস্তক্ষেপ ও সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম করে। নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করে এবং গণতান্ত্রিক চর্চা কে সমৃদ্ধ করে।

খায়রুল আহসান মানিক বলেন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বৈধতাকে শক্তিশালী এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ একটি অবশ্যম্ভাবী উদ্যোগ।

কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আচার, আচরণ ও প্রতিক্রিয়া মানবিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। শামসুল হাবীব বলেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ গণতান্ত্রিক নীতিকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করে.

বাংলাদেশের সম্পূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়া, প্রাক-নির্বাচন পর্যায় থেকে নির্বাচন-পরবর্তী সময় পর্যন্ত, অত্যন্ত নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার সাথে এগুলো পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন এবং নর্থ আমেরিকায় একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ হাব তৈয়ার করার বিষয়ে কাজ করার জন্য ও দেশে বিদেশে আস্থা তৈরিতে, গণতন্ত্রের প্রচারে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনায়নে কাজ করার জন্য সর্বসম্মত ভাবে একটি কমিটি গঠন করা হয়. কমিটিতে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং অভিজ্ঞতাকে একত্রিত করার প্রয়াস নেয়া হয় । প্রবাসী পেশাদার, মানবাধিকার কর্মী, আইন বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও পাকা নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের রাখার সিদ্বান্ত নেয়া হয় ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদকে আহ্বায়ক নির্বাচন করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়. তারা হলেন আবু মোর্শেদ চৌধুরী, ড. আনোয়ার জাহিদ, আলী আকবর মাসুম, নজরুল ইসলাম বাবুল ও খায়রুল আহসান মানিক, কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন, ফিরোজ মিয়া, শামসুল হাবীব ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ডেপুটি চিফ রিপোর্টার মো. সাজ্জাদ হোসেন।