সংবাদ প্রতিবেদন:

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউপি’র ৭নং ওয়ার্ডে এক রোহিঙ্গা যুবককে ভুয়া পরিচয়ে সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার করানো হয়েছে। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় জন্মসনদ, প্রত্যায়নপত্র ও ওয়ারিশ সনদসহ সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র জাল করে ৭নং ওয়ার্ড মুকবেকী বুধার পাড়া এলাকায় সাইফুল ইসলাম ওরফে রোহিঙ্গা সাবের (২৩) নামের যুবককে এনআইডি সনদ দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাইফুল ইসলাম ওরফে রোহিঙ্গা সাবের দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে শাপলাপুর ইউপি’র ৭ নং ওয়ার্ড মুকবেকী বুধার পাড়া এলাকায় বসবাস করে আসছে। সে সুবাদে পরিচয় গোপন করে এলাকার স্থানীয়দের সাথে তার সখ্যতা গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে স্থানীয় মোক্তার আহমদ (৪৬)কে পিতা ও তার স্ত্রী হাছিনা বেগম (৪৪) মাতা সাজিয়ে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে। পরে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার ফরিদুল আলমের সহযোগিতায় ভুয়া জন্মসনদ, প্রত্যায়নপত্র ও ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে ২০২২ সনে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের জন্য ভোটার কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনের মাধ্যমে ফাইল জমা করে। পরবর্তীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তথ্য গোপন ও পরিচয় যাচাই ব্যতীত তার নিবন্ধন ফাইলটি সত্য মর্মে স্বাক্ষর করে উপজেলা নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। পরে এনআইডি ভেরিফিকেশনের জন্য নতুন ভোটারদের ছবি তুলতে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকা হলে সে স্থানীয় মানুষজন জেনে যাবে সন্দেহে পরিষদে না গিয়ে জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ছবি তুলে আসে সাবের।

গত ১৪/০৮/২০২২ সালে তার জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়ার খবর প্রকাশ হলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় রোহিঙ্গা সাবের’ র কথিত মাতা হাছিনা বেগমের সাথে।

জানতে চাইলে তিনি জানান, তার ৭ সন্তানের মধ্যে ৪ জন মেয়ে ও ৩ জন ছেলে রয়েছে। সাইফুল ইসলাম ওরফে রোহিঙ্গা সাবের তার সন্তান নয় এবং তার সাথে বংশগত কোনো সম্পর্ক নাই বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে হাছিনা বেগমের স্বামী মোক্তার হোছেন দেশের বাইরে থাকার কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে সাইফুল ইসলাম ওরফে রোহিঙ্গা সাবের প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সে রোহিঙ্গা হওয়ার বিষয়টি সত্য বলে জানান। আমি ভুয়া পরিচয়ে মেম্বার ফরিদুল আলমকে ম্যানেজ করে সহজে এসব কাজ করছি। এনআইডি কার্ড পাওয়ার ব্যাপারে মেম্বারই সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন বলে জানান তিনি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, ৭ নং ওয়ার্ডে রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে ফরিদুল আলম মেম্বার বলেন, “আমরা তার এনআইডি কার্ড বাতিল করব। এই ব্যাপারে নির্বাচন অফিসারের সাথেও কথা হয়েছে আমার। নির্বাচন অফিসার আশ্বস্ত করেছেন অনলাইন থেকে ডিলেট করে দেবেন। হাতে পাওয়া এনআইডি কার্ড কীভাবে ডিলেট করবেন জিজ্ঞাসা করাতে সৎ উত্তর দিতে পারে নাই। তবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।”

ভোটার কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন বলেন, আমি মেম্বারের দেওয়া ফাইলগুলো নির্বাচনে অফিসে জমা দিয়েছি। অবৈভাবে তথ্য গোপন করে রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার ব্যাপারে আমি জানি না। শাপলাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, “এই ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। ৭ নং ওয়ার্ডের ফরিদ মেম্বার সবকিছু জানেন। তবে জন্মসনদ, প্রত্যায়নপত্র ও ওয়ারিশ সনদ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়ে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন তিনি।

এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার বিমলেন্দু কিশোর পাল জানান, রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার বিষয়ে আমি অবগত নই। আমরা জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া ফাইলগুলো শুধু ইস্যু করে থাকি। রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার ব্যাপারে আমরা সবসময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে চাই। জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার হলে তা অবশ্যই আইনের পরিপন্থি। আমি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।