সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, দেশের জনগণ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের শোষণ ও নিপীড়নের মাঝে বসবাস করে যাচ্ছে। এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য জনগণ রাজনৈতিক দল গুলোর দিকে চেয়ে আছে। জামায়াতে ইসলামী এদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি ও গণমানুষের প্রাণের সংগঠন। ফলে দেশের জনগণ জামায়াতের কাছে অনেক কিছুই প্রত্যাশা করে। এজন্য জামায়াতের ওয়ার্ড পর্যায়ের দায়িত্বশীলদেরকে আরো বেশি সচেতন থাকতে হবে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারকে নিশ্চিত করতে, দেশের মানুষের ইজ্জত, জান ও মালের নিরাপত্তা দিতে সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতাকে রুখে দিতে হবে। ইসলাম ও মানবতার চরম দুশমন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষার পরিবর্তে যারা পার্শ্ববর্তী দেশের কাছে দায়বদ্ধ সেই স্বৈরাচারী লুটেরা গোষ্ঠীকে ক্ষমতার মসনদ থেকে সরাতে হবে। এজন্য জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করতে হবে।
গতকাল শনিবার রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত ওয়ার্ড দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, মাওলানা আবু সাদিক, ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, ড. মোবারক হোসাইন সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, দ্বীনি আন্দোলনের একজন দায়িত্বশীল হিসেবে আমাদের হযরত মুহাম্মদ সা. এর সিরাতকে ভালোভাবে জানতে ও অনুধাবন করতে হবে। তিনি যে বিপ্লবী লোকগুলোকে তৈরি করেছিলেন তাদের ইতিহাস জানতে হবে। তারা দ্বীনের জন্য, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য যেভাবে ত্যাগ ও কুরবানী পেশ করেছিলেন আমাদেরকেও সেই ত্যাগ ও কুরবানীর জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তাহলেই আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা অনুযায়ী ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে সফলকাম হবো। আজকে বাংলাদেশের যে ময়দানে আমরা কুরআন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছি সেই ময়দানে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবিদের মত ত্যাগী, সাহসী, উত্তম চরিত্রের জজবা সম্পন্ন লোকের প্রয়োজন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যতো তাড়াতাড়ি এই ধরনের লোক তৈরি করতে সক্ষম হবে ততো তাড়াতাড়ি এই জাতি মুক্তি পাবে বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি। এ কাজে যতো বিলম্ব হবে দেশের জনগণের মুক্তি ততোই পিছিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল হিসেবে অতীত ইতিহাসের আলোকে দেশ ও জাতিকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। সামনে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন সেখানে জনগণের নেতৃত্ব পরিবর্তন হবে। জনগণ অধিকার আদায়ের জন্য ইতোমধ্যেই রাজপথে নেমে এসেছে। জামায়াত তার নিজস্ব অবস্থান থেকে দেশের প্রয়োজনে জনগণের মুক্তি নিশ্চিত করতে ইসলামী আদর্শকে সামনে রেখে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের আন্দোলনে ভয় পেয়ে বাংলাদেশ জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে আটক রেখেছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও নায়েবে আমীর সহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে রেখেছে। জামায়াতের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামীর উপরেই নয় সকল বিরোধী দল মত আদর্শের বিরুদ্ধে আওয়ামী সরকার জুলুমতন্ত্র পরিচালনা করছে। আমরা বার বার নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের দাবি জানিয়ে আসছি। যা এদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। অথচ ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে অব্যাহতভাবে বিরোধী দল ও মতকে দমন করছে। অন্যদিকে জনগণের মুক্তির আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছে। জামায়াত সেই আন্দোলনের সম্মুখে অবস্থান করে বাংলাদেশের এই অগণতান্ত্রিক অবৈধ আওয়ামী সরকারের পতন নিশ্চিত করবে ইনশাআল্লাহ।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জামায়াতের প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিটে সেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। দাওয়াতি তৎপরতার মাধ্যমে তাদের আদর্শিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হবে। সংগঠনের জনশক্তি কত? সদস্য সংখ্যা কত? সেটা আমাদের বিবেচনার বিষয় নয় বরং দেশের গোটা জনগণ আমাদের থেকে কতটা উপকার পাচ্ছে সেটাই দেখার বিষয়। সোশ্যাল ওয়ার্কের মাধ্যমে সর্বত্র জনগণের হৃদয়ে ভালোবাসা তৈরি করে নিতে হবে। জনগণের দাবি পূরণে, প্রত্যাশা পূরণে সবার আগে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই আপনার আদর্শ ও স্লোগান জনগণ সাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ওয়ার্ড দায়িত্বশীলদেরকে সংগঠনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। ওয়ার্ডের টিম সদস্যদের কাজের ফলোআপ করে তাদেরকে ময়দানে সক্রিয় রাখতে হবে। যে কোন কর্মসূচি পরবর্তী সময়ে পর্যালোচনা করে নিজেদের ভুলত্রুটি গুলো চিন্থিত করে সংশোধন করার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। মানুষের বিপদ-আপদে পাশে থেকে মানবতার সেবা করতে হবে। সামাজিক নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের ব্যর্থতায় দেশের অর্থনীতি আজ ধ্বংস হয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করা হয়েছে। তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এমতাবস্থায় দেশ ও জাতির প্রয়োজনে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকে সম্মুখে থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে।