মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধকর্ম আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গেছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২১ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৩ হাজার ২০ টি মামলায় ৬ হাজার ৮ শত ৩৭ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীকে আসামী করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সুত্র মতে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়েরকৃত ২ হাজার ৫৭টি মামলায় ২ হাজার ৯ শত ৭৯ জন রোহিঙ্গাকে আসামী করা হয়েছে। অস্ত্র আইনে ২৩৮টি দায়েরকৃত মামলায় ৫৫২ জন রোহিঙ্গাকে আসামী করা হয়েছে। ১৩১ টি হত্যা মামলায় ৯৯১ জন রোহিঙ্গাকে আসামী করা হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯৪ টি ধর্ষন ও ধর্ষন চেষ্টা মামলায় ১১৪ জন রোহিঙ্গাকে আসামী করা হয়েছে। ৬২ টি ডাকাতি ও ডাকাতি প্রচেষ্টা মামলায় ৫৩৫ জন রোহিঙ্গাকে আসামী করা হয়েছে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়েরকৃত ৬৫টি মামলায় ১৩৩ জন রোহিঙ্গাকে আসামী করা হয়েছে। ৪৪ টি অপহরণ মামলায় ২২২ জন রোহিঙ্গাকে আসামী করা হয়েছে। ৩৭ টি মানবপাচার মামলায় ১৮৯ জন রোহিঙ্গাকে আসামী করা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স এ্যাক্টে দায়েরকৃত ৪২ টি মামলায় ১০৪ জন রোহিঙ্গাকে আসামী করা হয়েছে।

এছাড়া আরো বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত ২৪৩ টি মামলায় ৯৪১ জন রোহিঙ্গাকে আসামী করা হয়েছে।

কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র গত ৬ মাসে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে ২৩ জন মাঝি (সর্দার) কে খুন করা হয়েছে।

সুত্র মতে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত পরিসংখ্যানে কক্সবাজার জেলা ও নোয়াখালীর ভাসান চরে মোট ১০ লক্ষ ৩২ হাজার ৩৪৩ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী রয়েছে। তারমধ্যে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লক্ষ ৬১ হাজার ৭২৯ জন। এর আগে আসা পুরাতন রোহিঙ্গা রয়েছে ৩৭ হাজার ৭৮২ জন। ভাসানচরে রয়েছে ৩২ হাজার ৮৩২ জন রোহিঙ্গা।

কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ বলেন, এমন কোন অপরাধ নেই, রোহিঙ্গা শরনার্থীরা করছেনা। রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজনও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তার মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো এখন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় কক্সবাজার অঞ্চলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিতে হবে গুরুত্ব দিয়ে।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক বলেন, রোহিঙ্গা অপরাধীদের কারণে কক্সবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিষিয়ে উঠেছে। তিন ব্যাটালিয়ন এপিবিএন পুলিশ, কক্সবাজার জেলা পুলিশ, দশম পদাতিক ডিভিশনের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনে কাজ করেও অপরাধকর্ম নিয়ন্ত্রণ আনতে পারছেনা। রোহিঙ্গারা পেশাদার অপরাধী। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। তদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিকল্প নেই বলে জানান-অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক।