মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজারের নবাগত জেলা ও দায়রা মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেছেন,
কক্সবাজার বিচার বিভাগে একদল দক্ষ, কর্মঠ, পরিশ্রমী ও মেধাবী বিচারক রয়েছেন। যা মন্ত্রণালয় থেকে আগে থেকেই আমাকে অবহিত করা হয়েছে। যাঁদের নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। তাঁদের নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কক্সবাজারে একটা মডেল ও পরিচ্ছন্ন বিচার বিভাগ উপহার দেওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। এই প্রচেষ্টায় তিনি আইনজীবী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক “বরণ অনুষ্ঠান” এ কক্সবাজারের নবাগত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন একথা বলেন।
বিচারপ্রার্থীদের জন্য যাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস যাতে আরো বাাড়ে, সেজন্য পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত বরণ অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন অ্যাডভোকেট নেজামুল হক।
জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন আরো বলেন, শুধু বিচারকদের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রমকে সাবলীল ও গতিশীল রাখা সম্ভব নয়। আইনজীবী সমিতি যেভাবে আজকে তিনি সহ বিচার বিভাগীয় জেলার সকল কর্মকর্তাকে ফুল দিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে বরণ করে নিয়েছেন, যাবার বেলায়ও যাতে একই ধরনের উঞ্চ বিদায় নিতে পারেন, সেজন্য বার ও বেঞ্চকে আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি আরো বলেন, বেঞ্চে কোন ধরনের অনিয়ম ও অগোছালো কার্যক্রম থাকলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। যাতে বিচার প্রার্থীরা কোনো দুর্ভোগের শিকার না হয়, সহজে স্বাধীন বিচার বিভাগের সুফল ভোগ করে। বিচারক মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন কক্সবাজারে নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীসম্পন্ন একটি বহুতল চীফ জুডিসিয়াল আদালত ভবন নির্মাণে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) নবাগত জেলা ও দায়রা এর সাথে কক্সবাজারের সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বরণ করে নেওয়ার মাধ্যমে বার ও বেঞ্চের মধ্যে একটা সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যা কক্সবাজার বিচার বিভাগের জন্য নিঃসন্দেহে কল্যানকর।
কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ নুরে আলম বলেন, বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের দ্বারা বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টরা যাতে কোন হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য তাঁর আদালতে তিনি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছেন। তারপরও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে তা তাঁকে জানানোর জন্য তিনি উপস্থিত আইনজীবীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ আবু হান্নান বলেন, বার ও বেঞ্চ হচ্ছে-একটি পাখির ২টি ডানার মতো। একটি ছাড়া আরেকটি অচল। তাই বিচারকার্যে গতিশীলতা আনতে হলে উভয়কেই সম্মিলিতভাবে এক ও অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কক্সবাজারের বিচারকেরা অতিরিক্ত মামলার চাপে ভারাক্রান্ত। স্থানীয় লোকজনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী অপরাধে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা। আর রোহিঙ্গাদের অপরাধের বিচার করাও এখন স্পর্শকাতর এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ রোহিঙ্গা অপরাধীদের সাথে অনেকক্ষেত্রে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসা ও আরএসও এর সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। তাই রোহিঙ্গা অপরাধী সম্পৃক্ত মামলায় যুক্ত হতে পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বনের জন্য তিনি আইনজীবী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান। সিজেএম আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিচারকদের বেশী প্রশংসা ও অযথা সমালোচনা করা উচিত নয়। বেশি প্রশংসা করলে তার প্রতি দুর্বলতা জম্মে, অহেতুক ও মিথ্যা সমালোচনা করলে তার প্রতি বিরাগ জম্মায়। তাই কাজের স্বীকৃতির জন্য ন্যূনতম যেটুকু মূল্যায়ন দরকার, বিচারকদের শুধুমাত্র সেটুকু প্রশংসা করা উচিত।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সাইফুল ইলাহী বলেন, বিচারকেরা ভুল ভ্রান্তির উর্ধ্বে নয়। এজন্য বিচরকেরা সবসময় সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে আইন অনুযায়ী ন্যায় বিচার করা চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেক সময় একজন বিচারকের দৃষ্টি ভঙ্গি ও আইনের ব্যাখ্যা আরেকজন বিচারকের দৃষ্টি ভঙ্গি ও আইনের ব্যাখ্যার সাথে পার্থক্য হলে সেখান বিচারকের আদেশে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। বিচারক মোহাম্মদ সাইফুল ইলাহী বলেন, বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থকে আইন অনুযায়ী প্রাধান্য দিতে গিয়ে, তাদের কল্যান দেখতে গিয়ে অনেকসময় আইনজীবীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, সাবেক সভাপতি ও জিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: ছৈয়দ আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী, পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট শিবু লাল দে, অ্যাডভোকেট বাবলু মিয়া।
বরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিচারকদের মধ্যে, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আদালতের বিচারক যথাক্রমে মোঃ আবদুল কাদের, মো: মোশারফ হোসেন ও নিশাত সুলতানা, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম ও দ্বিতীয় আদালতের বিচারক যথাক্রমে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও মোছা: রেশমা খাতুন, সিনিয়র সহকারী জজ সুশান্ত প্রাসাদ চাকমা, সিনিয়র সহকারী জজ মৈত্রী ভট্টাচার্য, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী জজ ওমর ফারুক, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা সাত্তার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নবাগত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন সহ উপস্থিত সকল বিচারকদের কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। অনুষ্ঠানে প্রায় অর্ধ সহস্র আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।