বিশেষ প্রতিবেদক:
সরকারি টানা তিন দিনের ছুটি এবং সপ্তাহব্যাপী পর্যটনমেলা ও বীচ কার্নিভাল ঘিরে কক্সবাজারে প্রচুর সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। হোটেল-মোটেলের ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং থাকায় অনন্ত লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করছে। এতে সমুদ্র সৈকত ও মেলা প্রাঙ্গণের পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্র পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী থেকে কলাতলী পয়েন্টের তিন কিলোমিটার এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। তাদের কেউ এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ পরিবার নিয়ে। এসব ভ্রমণ পিপাসুদের কেউ বিস্তৃর্ণ সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘুরাঘুরি, কেউ বিচ বাইক, জেটস্কি ও ঘোড়ায় চড়ে; কেউ সাগরের নীল জলে গোসল করে, আবার কেউ কিটকটে বসে পরশ নিচ্ছেন হিমেল হাওয়ার।
মেলা উপলক্ষে হোটেল-মোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁসহ পর্যটনের বিভিন্ন খাতে ছাড় দেওয়ার কথা থাকলেও এ নিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ভিন্ন তথ্য।
সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলাকে ঘিরে হোটেল কক্ষ ও খাবার রেস্তোরাঁসহ বিনোদনের বিভিন্ন সেবাখাতে দামের ছাড়ে কথা বললেও কেউ পেয়েছে, কেউ পায়নি বলে জানিয়েছেন পর্যটকরা। আবারও কেউ কেউ ছাড় তো নয়; উল্টো অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে খুশির কথা বলছেন তারা।
নেত্রকোনা থেকে সপরিবারে আসা সরকারি চাকরিজীবী শাহানুর ইসলাম বলেন, ‘পর্যটনমেলা বসেছে শুনে বেড়ানোর জন্য কক্সবাজার বেছে নিলাম। মেলার শুরুর দিন হিসেবে আবাসিক হোটেলে আমরা স্বাভাবিক দামে রুম পেলেও আমার এক আত্মীয়ের জন্য একই ধরনের রুম দেখতে গেলে দাম বেশি চায় হোটেল কর্তৃপক্ষ। তারা বলেন রুম সীমিত ওই দামে রুম দেওয়া যাচ্ছে না।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা সাজবীর-রেহেনা দম্পতি বলেন, ‘মেলা উপলক্ষে ছাড়ের কথা বললেও ছাড় পাচ্ছি না। বরং অতিরিক্ত দামে রুম নিতে হচ্ছে। তবে হোটেলে খাবারের দাম আগের মতোই স্বাভাবিক।’
তবে এ নিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে টানা তিন দিন সরকারি ছুটি থাকায় অনেকে মেলা উপলক্ষে ছাড় ঘোষণার আগে হোটেল কক্ষ বুকিং দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে ছাড় ছাড়াই তাদের স্বাভাবিক দাম দিতে হয়েছে। আবার কিছু হোটেল কর্তৃপক্ষ বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম কেন্দ্র করে অসাধু উপায় অবলম্বন করে থাকতে পারে। অন্যদিকে খাবার রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে মৌসুমী ব্যবসায়ী এবং নিয়ন্ত্রণহীন কিছু প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেছেন তারা।
হোটেল দি গ্র্যান্ড সেন্ডি স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহমান বলেন, ‘পর্যটকদের স্বাগত জানাতে আমরা সবসময় প্রস্তুত। তাই সাধ্যমতো চেষ্টা করছি ছাড় দেওয়ার জন্য। পর্যটকরা যাতে হয়রানি না হয়, সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে। সামনে আরও পর্যটক আসবে কক্সবাজারে। তাদের সেবা দিতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছি।’
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতেও আমরা সূলভ মূল্যে খাবারের দাম রাখছি। তালিকার বাইরে খাবারের অতিরিক্ত মূল্য রাখা যাবে না। যদি কোনো হোটেল-রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মূল্য রাখার অভিযোগ পাই, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ‘এই মুহূর্তে কক্সবাজারে লাখো পর্যটক অবস্থান করছে। হোটেল মোটলের কক্ষ অর্ধেকের চেয়ে বেশি বুকিং হয়েছে। দু-এক দিন পর আরও বেশি পর্যটক কক্সবাজারে আসবে বলে ধারণা করছি। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দানে আমরা আন্তরিক। কোথাও অতিরিক্ত হোটেল কক্ষ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কি-না, তা তদারকি করছি। এখনো পর্যন্ত তেমন অভিযোগ পাইনি। আমাদের সংগঠনের কোনো হোটেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
টানা ছুটি ও পর্যটন মেলাকে ঘিরে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে সার্বিক ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার শেহরীন আলম বলেন, পর্যটন দিবস উপলক্ষে চলমান পর্যটনমেলা ও বিচ কার্নিভাল ঘিরে ট্যুরিস্ট পুলিশ আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে। বেড়াতে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা সার্বক্ষণিক সজাগ রয়েছে। পর্যটন স্পটে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগত পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতের পাশিপাশি ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, ইনানীর পাথর রাণী সৈকত, হিমছড়ি ঝর্ণা, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, শহরের বার্মিজ মার্কেট, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও রামুর বৌদ্ধ বিহারসহ কক্সবাজারের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে।