জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:
প্রযুক্তির আসক্তি খারাপ নয় ,যদি তার সদ্ব্যবহার করা হয়। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কে কাজে লাগাতে হবে। ইনোভেটিভ কাজ কে এগিয়ে নিতে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করতে হবে।তরুণদের বিপুল সম্ভাবনা কে কাজে লাগাতে মাদকাসক্ত রোধ করতে হবে।
আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে "দি বাংলাদেশ এন্টি ড্রাগ ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত "ফেসবুকে আসক্তি , ক্যারিয়ার নির্বাচনে বিভ্রান্তি : সমাধান যে পথে" শীর্ষক দিনব্যাপী এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কর্মশালাটি চারটি সেশনে পরিচালিত হয়।সেগুলো হচ্ছে:
১) মাদকে কেন আসক্ত হয় এবং পরিত্রাণের উপায়,
২) ডোপ টেস্ট কি, কেন জরুরি,
৩)ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং ক্যারিয়ার গাইড লাইন এবং
৪)ইন্টারনেট আসক্তি এবং রক্ষার উপায়।
উদ্বোধনী সেশনে সভাপতিত্ব করেন দ্যা বাংলাদেশ এন্টি ড্রাগ ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম রলি।
কর্মশালাটি কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক শিরিনা খাতুন বিথি এবং কবি ও সাংবাদিক ইমরান মাহফুজ এর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর কিউরেটর এবং সাবেক শিক্ষা ও আইসিটি সচিব নজরুল ইসলাম খান (এনআই খান)।
আরো বক্তব্য রাখেন বিসিএস কোচিং কনফিডেন্স এর পরিচালক লায়ন তাসলিমা গিয়াছ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান , সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক ,রিডিং ক্লাবের সভাপতি এবং আইনজীবী এডভোকেট আরিফ খান , সাংবাদিক ও গবেষক কাজল রশীদ শাহীন , অনলাইন শিক্ষক ও প্রশিক্ষক কে. এম. হাসান রিপন , জাতীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা: অরূপ রতন চৌধুরী , সংগঠনের উপদেষ্টা খবির উদ্দিন আহমেদ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী ,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মশিউর রহমান প্রমুখ।
শিক্ষা ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের চিন্তার বিষয়কে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে হবে। আমরা পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ থেকে খারাপ জিনিস গুলো শিখি। তাদের ভালো জিনিস গুলো শিখি না।তারা সিদ্ধ খাবার খায়। এটা তাদের ভালো দিক। ল্যাটোস খাবারের কারণেও আসক্তি হয়।তাই খাবার নির্বাচনেও সতর্ক থাকতে হবে। আগে বড় পরিবার ছিল। এখন পরিবার ছোট হয়ে গেছে। আমি আগে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলাম। তখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা পেছনে থাকতো। নির্বাচনের জন্য ব্যবসায়ীদের টাকা নিয়ে থাকে অনেকেই। ফলে এখন ব্যবসায়ীরা অনুষ্ঠানের সামনে থাকে। পারিবারিক শিক্ষা, চিন্তার শক্তি মানুষ কে নিয়ন্ত্রণ করে।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, "মাদকাসক্ত ও মাদক সেবন শুধু নেশা নয়, এটা একটা রোগ। প্রেম ঘটিত কারণ, একাকিত্ব, হতাশার কারণে মাদকাসক্ত হয়ে যায়। মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিকল্প হিসেবে বিনোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের ৬৪ জেলায় মাদকসেবীদের চিকিৎসার সুযোগের আছে। কেউ মাদকাসক্ত হলে বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন," পৃথিবীর বড় বড় ডাক্তার, উকিলদের ডিগ্রিগুলো ইংল্যান্ডের। এখন দেশ থেকে যারা বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করতে বিদেশে উন্নত জায়গায় যায়, তারা আর ফেরত আসে না। এখন নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের তৈরি করার জন্য উপাদান গুলো আপনার হাতের মুঠোয়। আগে কথা বলার জন্য নীলক্ষেত অথবা উত্তরায় কল বুকিং দিয়ে বসে থাকতে হতো।
আগে গবেষণার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে লাইব্রেরির বই যথেষ্ট ছিল না। বায়তুল মোকাররম, জাদুঘরে যেতে হতো তথ্য সংগ্রহ করতে। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবকিছুই আপনার হাতে।
সাংবাদিকতা ও গবেষক কাজল রশীদ শাহীন বলেন , মানুষ চিন্তার মাধ্যমে পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে পারে। চিন্তার শক্তি কে জাগ্রত করতে প্রশ্ন করার মানসিকতা থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য পিজে হার্টগ সব শিক্ষার্থীর খোঁজ খবর রাখতেন।
তিনি আরো বলেন , "একসময় বঙ্গবাসী নামক পত্রিকায় মুসলমানদের কে হেয় করে সংবাদ লিখা হতো। তখন মুসলমানদের কে মানুষ বলে মনে করা হতো না।
রিডিং ক্লাবের সভাপতি এবং আইনজীবী এডভোকেট আরিফ খান বলেন, "জীবন কত কঠিন আপনার পিতা-মাতা কে জিজ্ঞেস করলে বুঝবেন।যা ঈশ্বর প্রদত্ত নয় , মানুষের তৈরি তা সংশোধন করা যায়। আমরা মেধা এবং পরিশ্রম কে এক করে ফেলি। মেধাবী সেই যে ঐ বিষয়ে প্রচুর পরিশ্রম করে।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, "মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জনগণ কে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছে। সকলের কাছে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য মসজিদের ইমাম থেকে শুরু সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কে সম্পৃক্ত করতে হবে। সমাজ ও দেশ থেকে মাদক দ্রব্য নির্মূল করে পরিবার কে মাদক মুক্ত করবো। আমরা মাদক নিজে সেবন করবো না এবং অপরকে সেবন করতে দিবো না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মশিউর রহমান বলেন, আমরা শুধু মাদকাসক্ত নয়, ক্ষমতার আসক্ত,বিভিন্ন নেশায় আসক্ত।প্রযুক্তির আসক্তি খারাপ নয়,যদি তার সদ্ব্যবহার করা হয়। যে দেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে,সে দেশ মাদকের ভয়াবহতা রুখে দিতে পারে।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।মিডিয়া পার্টনার ছিল সময় জার্নাল।অনুষ্ঠানে প্রতিটি সেশনের পর গান, কবিতা আবৃত্তি এবং কুইজের আয়োজন করা হয়। কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।