সিবিএন ডেস্ক:
ইসরায়েলে বেসামরিক মানুষ ও শিশুদের ওপর হামাসের নৃশংসতার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এ ছবি দেখিয়েছে ইসরায়েল। পরে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ছবিতে একটি নবজাতকের মরদেহ দেখা গেছে। রক্তের মধ্যে মরদেহটি পড়ে ছিল। বলা হয়েছে, গত শনিবার ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলায় শিশুটি মারা গেছে। ইসরায়েলি নারী, শিশুসহ বেসামরিক মানুষজনের ওপর নৃশংসতার জন্য বিশ্বজুড়ে হামাসের সমালোচনা চলছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন গতকাল সকালে তেল আবিব সফরে গেছেন। সাংবাদিকদের ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের নৃশংসতার ছবি ও ভিডিও তিনি দেখেছেন। হামাসের সদস্যরা শিশুদের গুলি করেছে, সেনাদের শিরচ্ছেদ করেছে, তরুণদের গাড়ির মধ্যে পুড়িয়ে মেরেছে।’
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর এটাই দেশটিতে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গতকাল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে জোটের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সামনে হামাসের নৃশংসতার একটি ভিডিও প্রদর্শন করেন। ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, ‘হামাসের হামলার সময় ইসরায়েলি শিশুদের বেঁধে রাখা হয়েছে। এরপর গুলি করা হয়েছে।’
অন্যদিকে নেতানিয়াহুর দপ্তরের পক্ষ থেকে এক্সে (টুইটার) ছবি প্রকাশ করে লেখা হয়েছে, ‘হামাসের দানবেরা শিশুদের ভয়ংকরভাবে হত্যা করেছে, পুড়িয়ে মেরেছে। হামাস অমানবিক, হামাস আইএসের মতো।’
এর আগে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এতে এক ইসরায়েলি নারী ও দুই শিশুকে মুক্ত করে দিতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, গত শনিবার ইসরায়েলে হামাসের ব্যাপক হামলার পর কোনো এক সময় তাঁদের আটক করা হয়েছিল।
হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা ইসরায়েলি নারী-শিশুদের নির্বিচার আটক করেছে। যদিও হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ‘অপরাধ সংঘটনের’ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে হামাস ভিডিওটি প্রকাশ করেছে।
আল-জাজিরার হাতে আসা ভিডিওটি দূর থেকে ধারণ করা। এতে অজ্ঞাতনামা এক নারী ও দুই শিশুকে একটি বেড়ার পাশে রেখে আসেন এক ব্যক্তি। সম্ভবত তিনি হামাসের সদস্য। ধারণা করা হচ্ছে, জায়গাটি গাজা ও ইসরায়েলের সীমান্ত বেড়া। দূরে আর পেছন থেকে ভিডিও করায় নারী ও শিশুদের মুখ দেখা যায়নি।
তবে কাসেম ব্রিগেডের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই নারী ইসরায়েলের নাগরিক। সেই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনকারী। সংঘাতের সময় দুই শিশুসন্তানসহ তাঁকে আটক করা হলেও এখন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের শুরু ৭ অক্টোবর। ওই দিন ইসরায়েলের ভূখণ্ডে নজিরবিহীন রকেট হামলা চালায় হামাস। মাত্র ২০ মিনিটে ৫ হাজারের মতো রকেট ছুড়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় সংগঠনটি। ভেদ করে ইসরায়েলের গর্ব করার মতো নিরাপত্তাব্যবস্থাকে।
শুধু তা-ই নয়, সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়েন হামাসের যোদ্ধারা। আটক করা হয় ১৫০ ইসরায়েলিকে। শুরুতে হতবাক হলেও দ্রুত পাল্টা জবাব দেয় ইসরায়েল। পাল্টা আক্রমণ করে গাজা উপত্যকায়। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এর পর থেকে ফিলিস্তিনে মুহুর্মুহু বোমা পড়ছে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। দেখা দিয়েছে, খাবারের চরম সংকট। অনেক জায়গায় নেই বিদ্যুৎ। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় মৃত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ।