নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে কক্সবাজারে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য জনগণের পাশে রয়েছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দানের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চাহিদাপত্র চাওয়া হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজারের পৌরসভা এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুই শতাধিক পরিবারকে ঢেউটিন বিতরণকালে এসব কথা বলেন তিনি। ঢেউটিন ছাড়াও এলাকার কয়েকশ মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রতিমন্ত্রী।
এনামুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের কারণে জেলায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে বাকি এলাকাগুলোতেও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছে পৌরসভা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি দেখতে যান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তার সঙ্গে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ত্রাণ বিতরণ শেষে প্রতিমন্ত্রী মহেশখালী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান। পরে ফিরে এসে বিকাল ৫টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে উপকূলীয় এলাকায় আরও সাড়ে ৪০০ সাইক্লোন শেল্টার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার গড়ে তুলতে পারিনি আমরা। প্রকল্প চালু রয়েছে, প্রতি বছর নতুন নতুন সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেজন্য দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ টাকা, ৫০ মেট্রিক টন চাল, পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামতের জন্য এক হাজার বান্ডিল ঢেউটিন, ৩০ লাখ টাকা ও শিশুখাদ্য দেওয়া হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে যা দেখেছি, বরাদ্দকৃত এসব ত্রাণ পর্যাপ্ত নয়। আমি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আরও ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। এজন্য আরও কী কী প্রয়োজন হয়, তার চাহিদাপত্র দ্রুত পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় হামুনে জেলার ৯ উপজেলা ও দুই পৌরসভায় ৪২ হাজার ৯৫৯টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজার ১০৫টি ঘর। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৭৪৯টি ঘরবাড়ি। মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। অসংখ্য গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে।