সিবিএন ডেস্ক: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করা হবে আগামী শনিবার (২৮ অক্টোবর)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করবেন। ওই দিন সকাল ১০টায় নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের নামফলক উন্মোচন করবেন তিনি। এরপর টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে কাফকো কলোনি সংলগ্ন কেইপিজেড মাঠে জনসভায় বক্তব্য দেবেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ জনসভার আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে বন্দর নগরীতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। চট্টগ্রাম সিটি করপোশেনের (চসিক) উদ্যোগে পুরো নগরীকে পরিপাটি করে তোলা হয়েছে; সাজানো হয়েছে ভিন্ন আমেজে। পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা প্রান্তে চলছে সাজসজ্জার কাজ। সংস্কারের পাশাপাশি রঙ করা হচ্ছে সড়কগুলো। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পোস্টার-ব্যানারে চেয়ে গেছে নগরী ও আনোয়ারা প্রান্তের রাস্তাঘাট। পতেঙ্গা প্রান্তে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক ম্যুরাল। সঙ্গে আছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান। জনসভার স্থলে নৌকার আদলে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ।
জনসভা আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে বলে জানালেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভার সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। জনসভা দুপুর ২টায় হওয়ার কথা ছিল। এখন সকাল ১০টায় জনসভা শুরু হবে। একইসঙ্গে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের নামফলক উন্মোচনের পরপরই প্রধানমন্ত্রী জনসভায় যোগ দেবেন। জনসভায় অন্তত ১০ লাখ মানুষ উপস্থিত থাকবে। এ লক্ষ্যে দক্ষিণ জেলা ছাড়াও নগরী ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করার লক্ষ্যে বুধবার বিকালে মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল স্তরের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর দেশ ও জাতির গর্ব করার মতো একটি দিন। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বৃহৎ ট্যানেল উদ্বোধন করবেন। বাঙালির এই স্বর্ণালি স্বপ্ন ও প্রত্যাশার প্রাপ্তিযোগ বিএনপি-জামায়াত এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না। তাই তারা ওই দিন ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিতভাবে নাশকতা-অরাজকতার জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে মহাসমাবেশ ডেকেছে। এটা কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি দেশি-বিদেশি ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির নির্বাচন বানচাল এবং জনগণের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ধ্বংসাত্মক মহড়া।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। গত বছরের ২৬ নভেম্বর টানেলের দক্ষিণ প্রান্তের একটি টিউবের পূর্তকাজের সমাপ্তি উদযাপন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়লি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ফ্লাইওভার থাকবে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টানেল নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন বড় ধরনের কোনও কাজ নেই। চলছে শেষ মুহূর্তের টুকিটাকি কাজ। দুটি টিউবই প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের পরই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’