সিবিএন ডেস্ক: বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা চলতি বছরের জুলাই মাসে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এসেছিলেন। তার নাম মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফী। উল্লাপাড়ায় এসে তিনি নিজেকে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সলঙ্গা থানা ও উল্লাপাড়া থানা পুলিশের কাছে প্রটোকল দাবি করেছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলাই মাসে উল্লাপাড়ার একটি রেস্টুরেন্টে চা-নাস্তা করেছিলেন তারা। তিনি সে সময় উল্লাপাড়ায় ডাকবাংলোতেও সময় কাটিয়েছেন। সেখানে ফ্যাসিলিটি কম থাকায় তা নিয়ে রাগারাগিও করেছেন। এমনকি, স্থানীয় এমপির কাছেও অভিযোগ করে গেছেন। ওই সময় তিনি বিএনপির সাবেক এমপি এম আকবর আলীর গাড়িতে চলাচল করতেন বলে জানা গেছে। ওই সময় তার সঙ্গে তার খালাতো ভগ্নীপতি উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল বাতেন হিরুর পরিবার সঙ্গ দিয়েছেন।
২০২২ সালের ৬ আগস্ট মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফীর খালাতো ভগ্নীপতি নিজ ফেসবুকে পোস্টে আব্দুল বাতেন হিরু এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেই পোস্টে সলঙ্গা ও উল্লাপাড়া থানার ওসির সঙ্গে রেস্টুরেন্টে আলাপরত বেশ কয়েকটি ছবি ব্যবহার করা পোস্টে হিরু লেখেন, ‘আমার স্ত্রীর আপন খালাতো ভাই বেল্লাল ভাই উল্লাপাড়ায় এসেছিলেন সুদূর ওয়াশিংটন থেকে। তার পৈত্রিক বাড়ি ছিল মানিক দিয়ায়। দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করতে ৩৬ বছর পর উল্লাপাড়ায় এসেছেন। অমায়িক এ ভদ্রলোক ৩/৪ দিন প্রশাসনের দেখভালে ছিলেন’। পোস্টে তিনি জাহিদুল ইসলাম আরেফীকে মেম্বার অব ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি উল্লেখ করেন। পোস্টটিতে তিনি উল্লাপাড়া ও সলঙ্গা থানার ওসির সঙ্গে আলোচনারত জাহিদুল ইসলাম আরেফীর ছবিও দেন।
উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর আগস্ট মাসে তিনি এসেছিলেন। তখন আব্দুল বাতেন হিরু আমাকে বলেছিলেন যে ‘তার স্ত্রীর আপন খালাতো ভাই এসেছেন। এলাকা ঘুরে দেখবেন, কোনও সমস্যা হলে একটু দেখবেন’। আরেফী এ এলাকায় যে স্কুলে পড়তেন, সেটা দেখতে এসেছেন। পরে সলঙ্গা থানার ওসি আর আমি উল্লাপাড়ায় রেস্টুরেন্টে চা খেতে যাই। বাতেন তখন বলেন, আরেফী ভাই কিন্তু বড় পদে আছেন। তখনই আমার সন্দেহ হয়। বড় পদে যদি জো বাইডেনের কিছু হন, তাহলে তো সরকারি প্রটোকল পাবেন।
এরপর আবার এসেছিলেন। আমি এসপি স্যারকে রিপোর্ট করেছিলাম, স্যার উনার আচরণের মধ্যে ত্রুটি আছে। তারপর এমপিকে বলেছিলাম। তখন এমপি সাহেব তাকে ডেকে নিয়েছিলেন। যখন এখানে এসে ডাকবাংলোয় ওঠেন, তখন সেখানে তার সঙ্গে তিন/চার জন দেখা করতে এসেছিলেন।
ওসি নজরুল ইসলাম আরও বলেন, গোপন সংবাদে জানতে পারি, উনারা বিএনপির সাবেক এমপি আকবর আলীর লোক। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এসপি স্যার ও এমপি সাহেবকে জানাই। তখন এমপি সাহেব তার সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় তিনি নিজেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির মেম্বার ও জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেন। তখন আমার কাছে তা মনে হয়নি। পরে বুঝতে পারি, আসলে তিনি তার বাপ-দাদার জমি উদ্ধার করতে এসেছেন।
‘‘তাকে ফ্রড মনে হয়। আমি তাকে বললাম, আপনি যদি সত্যিকার অর্থে বাইডেনের উপদেষ্টা হয়ে থাকেন, তাহলে তো আয়োজন অ্যাম্বাসি থেকে করবে। কিন্তু আপনি একা কেন? তখন তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে চিঠি এনে দেখাব’। তিনি আকবর আলীসহ বিএনপির লোকজনকে দাওয়াত করে খাইয়েছেন। ‘আপনি আমেরিকার সিটিজেন, আপনার তো রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কথা’। তিনি কোন কিছু না বলে চলে যান।’’
হাটিকুমরুল ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি কাওসার আলী জানান, আরেফীর পুরো পরিবার ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকায় থাকেন। তারা খুব একটা এলাকায় আসেন না। এলাকার লোকজনের সঙ্গেও তাদের তেমন যোগাযোগ নেই। লোকমুখে শোনা যায়, এম আকবর আলী আমেরিকায় গেলে আরেফীর বাসায় থাকেন।
সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক জানান, মিয়া জাহেদুল ইসলাম আরেফী এলাকায় বেল্লাল নামে পরিচিত। ছাত্রজীবনে পরিবারের সঙ্গে আমেরিকায় যান। সেখানে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত। তবে তিনি মানিক দিয়া গ্রামে এসে নিজেকে জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেন। এখানে তার কোনও বাড়ি নেই। গত জুলাই মাসে তার তার দাদা-দাদির জন্য দোয়া মাহফিল করতে এসেছিলেন। সেই সময় তিনি উল্লাপাড়া ডাকবাংলোয় ছিলেন। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি এম আকবর আলীর সাথে জাহেদুল ইসলাম আরেফীর বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রে ধরে আকবর আলীর সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। তবে মানিক দিয়া গ্রামের স্বজনেরা বিএনপির সমর্থক হলেও সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত নন।
এ বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি এম আকবর আলীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আরেফী নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তার পাশে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকেও দেখা গেছে। জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা পরিচয়দানকারীর বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়। কথিত উপদেষ্টা গত (২৯ অক্টোবর) দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সময় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়।