মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি:

পাহাড়ে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় ‘হাজী মো. আলী মিয়া’ নামের একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলী মিয়া। ওই সময় পাশের আলীকদম সেনাবাহিনীর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মো. শাহজান মিয়ার সার্বিক সহযোগিতায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এক সভায় আলহাজ্ব মো. আলী মিয়ার প্রস্তাবে ৬৯ পদাতিক ব্রিগ্রেডের তৎসময়কার ব্রিগ্রেড কমান্ডার সুবেদ আলী ভূঁঞা মাতামুহুরী নদীর নামানুসারে কলেজটিকে ‘মাতামুহুরী কলেজ’ নামে নামকরণ করেন। পরের বছর কলেজটি পৌরসভার টি.টি.এন্ড ডি.সি থেকে সবুজ পাহাড়ের ছায়া ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বর্তমান স্থান লাইনঝিরিতে স্থানান্তরিত হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এম. আশরাফুল ইসলাম চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং আলীকদম সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই কলেজটি মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি লাভের পর বিশেষ বিবেচনায় কলেজটি এমপিও ভূক্ত হয়। একই বছর কলেজটি একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুমতিও পায়। এরপর ২০০৬-০৭ শিক্ষা বর্ষে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মুজিবুর রহমান মানিকের প্রচেষ্টায় আলীকদম সেনা সেনাবাহিনী, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সার্বিক সহযোগিতায় কলেজ ডিগ্রি কোর্স প্রথম অধিভূক্তি লাভ করে।

কলেজ সূত্র জানায়, লামা ও আলীকদম এবং পাশের চকরিয়া উপজেলার ঝরে পড়া-কর্মজীবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করার লক্ষ্যে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের প্রচেষ্টায় ২০১১ সালে বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীনে এইচ.এচ.সি প্রোগ্রাম এবং ২০১৫ সালে বিএ/বিএসএস প্রোগ্রাম চালু হয়। শেষে ২০১৮ সালের বছরের ৮ আগস্ট কলেজটি জাতীয়করণ করে সরকার। বর্তমানে কলেজে প্রায় তিন হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর নানা উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ডে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে এ কলেজটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির একান্ত প্রচেষ্টায় কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের ফলে কলেজটি এখন দৃষ্টি নন্দন হয়ে ওঠে। তবে কলেজটি অনার্স কোর্স চালু না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। বাহিরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা এতদ্বঞ্চলের মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় নাা। বিধায় কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু করা এখন এ কজেলে অধ্যয়নরত ৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও দুই উপজেলাবাসীর প্রাণের দাবী। কলেজে অনার্স কোর্স চালু করতে লামা ও আলীকদমবাসী পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির সু দৃষ্টি কামনা করেন।

এদিকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ৩ বার দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমবার ১৯৯২ সালে, দ্বিতীয়বার ২০১০ সালে এবং সব শেষে ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বর্তমানেও দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরই গতিশীল হয়ে উঠে কলেজের সার্বিক পরিবর্তন শুরু হয়। ইতিমধ্যে ৫তলা বিশিষ্ট কলেজের নতুন একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, ছাত্রাবাসের প্রাচীর, কলেজ জামে মসজিদ, ছাত্রাবাসের দ্বিতল নির্মাণ, ছাত্রী নিবাস, শিক্ষক কোয়ার্টার, শহীদ মিনার, কনফারেন্স হল, প্রধান গেইটসহ বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ, অভ্যন্তরীন রাস্তার কাজ এবং ড্রেণ নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো. ইয়াসিন আরাফাত বলেন, সরকারি মাতামুহুরী কলেজের গত কযেক বছরে কয়েক কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে দৃষ্টি নন্দন হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাসটি। এটি অবদান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি মহোদয়ের।

এদিকে লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র আন্তরিক প্রচেষ্টায় কলেজে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কলেজটি জাতীয়করণের পেছনেও সম্পূর্ণ অবদান পার্বত্য মন্ত্রী মহোদয়ের। এ অবস্থায় কলেজের শিক্ষক, শিক্ষিকাবৃন্দ তথা গোটা আমরা লামা ও আলীকদমবাসী পার্বত্য মন্ত্রীসহ প্রধান মন্ত্রীর নিকট চির কৃতজ্ঞ।

জানাতে চাইলে সরকারী মাতামুহুরী ভারপ্রাপ্ত কলেজ অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন, কলেজটি জাতীয়করণ করা এবং ভৌত অবকাঠামোর যে উন্নয়ন, সব কিছুই বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র প্রচেষ্টায়ই সম্ভব হয়েছে। এজন্য কলেজের শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক তথা লামা ও আলীকদম উপজেলাবাসী মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট চির কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আগামি প্রজন্মের উচ্চ শিক্ষা লাভের পথ আরো সুগম হবে। এ জন্য বরাবরের মত মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।